শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতির মুক্তির গাইডলাইন: মো. খসরু চৌধুরী (সিআইপি)

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
  • ১৩৭ বার পঠিত

বাঙালির জাতীয় জীবনের অনন্য এক দিন ৭ মার্চ। ৫২ বছর আগে এই দিনে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান তথা আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রচিত হয়েছিল অনন্য এক কবিতা। সর্বকালের সেরা বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমাবেশে ঘোষণা করেছিলেন তাঁর সেই অমর পঙ্ক্তি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধু দৃঢ় প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি যদি নির্দেশ দিতে নাও পারেন, তবে আক্রান্ত হলে বাঙালিরা যেন যার কাছে যা আছে তা নিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে ভাষণ দেন জাতিসংঘের স্বীকৃতি অনুযায়ী তা দুনিয়ার সেরা ভাষণগুলোর একটি।

চলতি বছর থেকে ৭ মার্চ প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উড্ডীন করা হচ্ছে। জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ৭ মার্চ দিনটি মাইলফলকের ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ভারতবর্ষ ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হয় দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ১২০০ মাইলের ব্যবধানে দুটি ভূখন্ড নিয়ে গঠিত পাকিস্তানে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ।

কিন্তু পাকিস্তানি শাসনামলে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত ও শোষিত করার ঘৃণ্য ইতিহাস রচিত হয়। এর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব রুখে দাঁড়ায় বাঙালিরা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। কিন্তু বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রতিহত করতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও স্থগিত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানও ঘোষিত হয়েছে ভাষণে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের ৭ মার্চ একটি মাইলফলক। একাত্তরের উত্তাল ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সে ভাষণ শুধু উপমহাদেশই নয় পুরো বিশ্ব পরিসরে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (বিশ্বের প্রমাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ছাড়াও বিশ্ব নেতা, বুদ্ধিজীবি এ ভাষণ সম্পর্কে তাদের বিশ্লেষণ ও বিশ্বরাজনীতিতে তার প্রভাব ও প্রয়োগ নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল দলিল।’

ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বলেছেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’

কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, কেবল ভৌগলিক স্বাধীনতাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন মানুষের মুক্তি ও বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। সাম্য ও সম্পদের বৈষম্য দূর করাই স্বাধীনতার সমার্থক। আর এ সত্যের প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের ভাষণে।’

যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট যোশেফ মার্শাল টিটো বলেছেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, এই ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিব প্রমাণ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানিদের কোন রকম বৈধতা নেই। পূর্ব পাকিস্তান আসলে বাংলাদেশ।’

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ একটি অনন্য দলিল। এতে একদিকে আছে মুক্তির প্রেরণা। অন্যদিকে আছে স্বাধীনতা-পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা।’

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছিলেন মানব জাতির পথ প্রদর্শক। তার সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র পৃথিবীও স্বীকার করবে।’

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশও ঘোষিত হয় তাঁর বজ্রকণ্ঠে। পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়েছিল। এ দেশের তরুণ-তরুণী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সেদিন এই একটি কণ্ঠের মন্ত্রমুগ্ধে আবিষ্ট হয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। স্বাধীনতা এবং মুক্তির ঐকতানে এক হয় জাতি। এরই মধ্যে নানা কূটকৌশল চালাতে থাকে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও শাসকগোষ্ঠী। প্রথমেই তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকে সময়ক্ষেপণ।

এভাবেই আসে ২৫ মার্চের কালরাত্রি। পাকবাহিনী ভারী অস্ত্র, কামান, সাঁজোয়া যান, ট্যাঙ্ক নিয়ে অপারেশন সার্চলাইট নামে এ দেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মেতে ওঠে নির্মম হত্যাযজ্ঞে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা, শাঁখারীবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নৃশংস হামলা চালায়। সেই রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

সেই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। অসীম ত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান বাঙালিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়েছে। প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙলি তার মুক্তির সংগ্রামে জয়ী হয়।

পরিশেষে বলছি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ওই ভাষণ এখন বিশ্বঐতিহ্যের অংশ। এটা কালজয়ী ভাষণ। ওই ভাষণের আবেদন খুব সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায় না। এটি একটি জাতির মুক্তির গাইডলাইন।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com