দুই দফা বাড়ানোর পরও কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে হজ নিবন্ধনের সময় আরো এক দফা বাড়িয়ে ১৬ মার্চ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফা সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ৭ মার্চ। ওই দিন পর্যন্ত মোট ৫৬ হাজার ৩০১ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৮৮৯ জন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৪৭ হাজার ৪১৮ জন নিবন্ধন করেছেন। এখনো সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫৫ হাজারের বেশি কোটা খালি আছে।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৯৭ হাজার ১১২ জন, সব মিলিয়ে এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ হজযাত্রী পাঠাতে পারবে বাংলাদেশ।
সরকারি পর্যায়ে খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার এবং বেসরকারিতে ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বেশি। তবে কোরবানি, খাবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করার পর হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ দাঁড়াবে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায়। এসব খরচ ধরে ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
মূল প্যাকেজে বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকা বেড়ে দুই লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অথচ ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সহ-সভাপতি জহিরুল কবির চৌধুরী বলেন, আগে এই সময়ে আমাদের এজেন্সিগুলো হজ যাত্রীদের পাদচারণায় মুখর থাকত। এবার আর তেমন নেই। এবার যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই চূড়ান্ত নিবন্ধন বাতিল করতে আসছেন।
তিনি জানান, মূলত খরচের কারণেই এবার অনেকে হজে যেতে পারছেন না। এখন যারা হজে যাবেন তারা ২০১৭-১৮ সাল থেকে নিবন্ধন শুরু করেন। তারা যে খরচের হিসাব মাথায় রেখে নিবন্ধন করেছিলেন এখন খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই তাদের সাধ্যের মধ্যে আর নেই।
তার কথা, যেসব কারণে হজের খরচ বেড়েছে তার মধ্যে বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া এবং সৌদি সরকারের শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ অন্যতম। তবে সরকার কিছু বিষয় শিথিল করলে খরচ কমানো যেত। আমরা সরকারের কাছে বিমান ভাড়া কমানোসহ ভর্তুকি দাবি করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের ৪৫ দিন হাজিদের সৌদি আরবে রাখতে হয়। আর তাদের আমরা মসজিদুল হারামের একদম কাছে রাখি। সরকার যদি আট-নয় কিলোমিটার দূরে রাখার অনুমতি দিতো এবং সৌদি আরবে অবস্থানের সময় কমাত তাহলে খরচ অনেক কমে যেত। আর কোনো কোনো দেশ ভর্তুকি দেয়। এখন আমরা চাইলেও সেটা করতে পারব না। কারণ, সরকার বলে দিয়েছে প্যাকেজের চেয়ে কম নেওয়া যাবে না।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মো. মতিউল ইসলাম জানান, এবার হজের খরচ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। এই কারণে বিমান ভাড়াও বেড়ে গেছে। তার ওপর সৌদি সরকার সেখানে খরচের ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ করেছে।
হাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে আট লাখ ৭১ হাজার প্রাক-নিবন্ধন করলেও আট লাখ ৪৫৬ জনের সিরিয়াল অনুযায়ী চূড়ান্ত নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ ৪৩ হাজার আগ্রহী আগেই নিবন্ধন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখনো ৭১ হাজার প্রাক-নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাকি আছে। চূড়ান্ত নিবন্ধনের সিরিয়াল অনুসারে হজে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সিরিয়াল উন্মুক্ত করা দেওয়া হলে হয়তো শেষ পর্যন্ত হজের কোটা পূরণ হবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৬ মার্চের পর সেরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে মতিউল ইসলাম আশা করেন শেষ পর্যন্ত কোটা পূরণ হবে। তিনি বলেন, সময় বড়িয়ে দেওয়ার পর চূড়ান্ত নিবন্ধন বাড়ছে। তিনি জানান আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি নিবন্ধন চূড়ান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, পাকিস্তানে আনুমানিক হজ প্যাকেজ হবে প্রায় ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লাখ টাকা। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বছর প্রত্যেক হজ যাত্রীর জন্য এক লাখ রুপি ভর্তুকি দেবে। ভারতীয় মুসলমানদের প্যাকেজ হবে তিন লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি চার লাখ টাকার মতো।
সূত্র: ডয়চে ভেলে