সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

কারসাজি যেন পিছু ছাড়ছে না শেয়ারবাজারের

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩
  • ৯৮ বার পঠিত

কারসাজি যেন পিছু ছাড়ছে না শেয়ারবাজারের। এক মাসের কম ব্যবধানে যে চক্রের ক্যারিশমায় রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দর ৯০ টাকা থেকে ২২৩ টাকায় পৌঁছেছে, সেই চক্রই এবার আস্তানা গেড়েছে মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সের। হঠাৎ লাফিয়ে বাড়ছে এই ‘দুর্বল’ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। মাত্র ১৫ কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির ৬৭ টাকা দরের শেয়ারের সোমবার দাম উঠেছে ১১৩ টাকা। যাকে সন্দেহজনক মনে করছেন পুঁজবাজার বিশ্লেষকরা। এমনকি খোদ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একাধিক কর্মকর্তা এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিকে সন্দেহের দৃষ্টিতেই দেখছেন। প্রতিষ্ঠান দুটি নজরদারিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগকারীদের অনেকই মনে করেন, শেয়ারবাজারে বড় ধরণের উত্থান-পতনের পেছনে একটি মহলের কারসাজি রয়েছে। বিনিয়োগকারী সেজে ছোট-বড় এসব চক্র দেশের পুঁজি বাজারে সক্রিয় রয়েছে। এসব কথিত বিনিয়োগকারীরা (গ্যাম্বলার) লোভের ফাঁদে ফেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতানোর ছক কষছেন। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে রূপালী লাইফে যে চক্র ভর করেছে সেই চক্রই মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সেও কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য আয় না থাকলেও শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ১৪ মে মেঘনা লাইফের শেয়ার ছিল ৬৭.৮০ টাকা। ২৮ মে তা পৌঁছে ৯০.৮০ টাকায়। এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে গতকাল রবিবার ওই শেয়ারের দাম ওঠে ১০৩.১০ টাকা। আর সোমবার ১১৩ টাকা ৪০ পয়সা। কোম্পানিটি এদিন পুঁজিবাজারের ২০ শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় নম্বরে ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, কারসাজির মাধ্যমে একটি বিশেষ চক্র রূপালী লাইফ ও মেঘনা লাইফের শেয়ারের দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স শেয়ার কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত পুঁজি বাজারের বিতর্কিত বিনিয়োগকারী লুৎফুল গনি টিটুর পাতানো ছকেই রূপালী লাইফ ও মেঘনা লাইফের শেয়ারের দাম রাতারাতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এই টিুটু চক্র একের পর এক বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

বিএসইসি সূত বলছে, একইভাবে টিটু ২০১৯ সালের ১ আগস্ট থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত সহযোগিদের নিয়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা ৭০ পয়সায় তোলে। এই প্রক্রিয়য়ায় লুৎফুল গনি টিটু, তার স্ত্রী শাম্মি নেওয়াজ ও টিটুর প্রতিষ্ঠান সাতরং এগ্রো ফিশারিজ মোট ১ কোটি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫৭ টাকা মুনাফা করে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে লুৎফুল গনি টিটুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। টিটুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন ও বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে সন্দেহে রয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠানসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ আছে কিনা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তাও।

অন্যদিকে এই মূল্য বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে করছেন পুঁজি বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এক শ্রেনীর কথিত বিনিয়োগকারী পরিকল্পিতভাবে কৃত্রিম উপায়ে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়াচ্ছেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে অর্থ হাতানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য। শেয়ারবাজারে কারসাজি চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠায় এভাবে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে।

তবে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো নজরে রয়েছে জানিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান বলেন, দাম ওঠা-নামা শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। যেসব প্রতিষ্ঠানের দাম উঠতে থাকে, সেগুলো নজরে রেখে ডিএসই পর্যালোচনা করে থাকে। কারসাজি বা কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ডিএসইর একটি সূত্র জানিয়েছে, মেঘনা লাইফ ও রূপালী লাইফের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এ দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পেছনে যে টিটুর হাত থাকার কথা পুঁজিবাজারে আলোচনা হচ্ছে, সে বিষয়ে ডিএসইর নজরদারি রয়েছে। ইতোমধ্যেই লুৎফুল গনি টিটু শেয়ার কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত। তার দুটি কোম্পানিকে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ কারসাজিতে টিটুর স্ত্রীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে বিএসইসির তদন্তে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ই দেখা যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট শেয়ার কিনে নিয়ে কারসাজি করছে। তাদের কারসাজির কারণে সেসব শেয়ারের দাম বাড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ পুরো বাজার।’

নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তেমন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না মন্তব্য করে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, ‘কারসাজির ফলে ৩৫ টাকার শেয়ার হয়ে যায় ৩০০ টাকা, ৮০ টাকার শেয়ার হয়ে যাচ্ছে ১ হাজার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে যে তারল্যটা থাকার কথা তা থাকে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চক্রটি ছক কষে কম দামে মেঘনা লাইফের শেয়ারের বেশিরভাগ কিনে হাতে নিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়েছে। তারা নিজেদের লোক দিয়ে উচ্চমূল্যে ওই শেয়ার কিনতে থাকেন। আর দাম উঠতে থাকে। বাজারে আলোড়ন তোলা হয় যে, মেঘনা লাইফের শেয়ারের দাম আরও বাড়বে। তাদের সাজানো ফাঁদে ফাঁসাতে ভুয়া প্রচারনা (ফলস মার্কেটিং) চালানো হয়। এভাবেই অতি উচ্চ মূল্যে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে মেঘনা লাইফের শেয়ারগুলো বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতানোর পায়তারা করছে চক্রটি।

এ কোম্পানির শেয়ারে মোটা অংকের লাভ হবে বলে ভুয়া প্রচারনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আলোড়ন তুলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে চাইছে চক্রটি। এভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কষ্টার্জিত বিনিয়োগ হাতিয়ে পকেট ভারি করতে চাচ্ছে পুঁজিবাজারের চিহ্নিত ওই চক্রটি।

একইভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করার মিশন নিয়ে রূপালী লাইফের শেয়ারের দামও কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে শেয়ার বাজারে বড় আকারের কেলেঙ্কারি ঘটে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে। ১৯৯৬ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। শুধু একটি মামলায় ট্রাইব্যুনাল দুজনকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল।

সূত্র: ঢাকাটাইমস

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com