বড় বোনের বিয়ে খেতে মাদরাসা থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসে শিশু ওমর ফারুক শান্ত (১০)। বোনের বিয়ের দিন গায়ে রঙ মেখে, আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাসও করে। সন্ধ্যায় বিয়ে পড়ানো শেষে বোনের সঙ্গে তার নতুন শ্বশুরবাড়িতে যায়। কিন্তু সেখান থেকে আর জীবিত ফেরা হলো না তার।
হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের হাটজয়পুর গ্রামে। শান্ত ওই গ্রামের মৃত সিরাজ খাঁ’র ছেলে। সে রাজবাড়ী শহরের দারুল উলুম ভাজনচালা দাওরায়ে হাদিস মাদরাসায় মক্তব বিভাগে পড়তো।
শান্তর চাচা মিরাজ খাঁ জানান, শুক্রবার (১৮ আগস্ট) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের মধ্য মিতরা গ্রামের মাসুদের সঙ্গে শান্তর বড় বোন রিতুর বিয়ে হয়। বোনের বিয়ে উপলক্ষে শান্ত গত বুধবার মাদরাসা থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে আসে। বিয়ের দিন গায়ে রঙ মেখে, আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে সে। সন্ধ্যায় বিয়ে পড়ানো শেষে বোনের সঙ্গে তার নতুন শ্বশুরবাড়িতে যায়। শনিবার দুপুরে সে ওই বাড়ির শিশুদের সঙ্গে পাশের ধলেশ্বরী নদীতে গোসল করতে যায়। সেসময় হঠাৎ সে নদীতে ডুবে যায়। তার সঙ্গে থাকা শিশুরা ওই বাড়ির লোকজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে শান্তকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শান্তর দুলাভাই মাসুদের দাদা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার নাতিকে বিয়ে করিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। নতুন বউয়ের সঙ্গে তার ছোটভাই শান্তও আসে। শনিবার দুপুরে সে আমাদের বাড়ির শিশুদের সাথে ধলেশ্বরী নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়।’
তিনি বলেন, এদিন আমাদের বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠান ছিল। শিশুটির আকস্মিক মৃত্যুতে বিয়ে বাড়ির আনন্দ শোকে পরিণত হয়। নববধূর কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। এ ঘটনায় আমরাও খুব মর্মাহত।
এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় শান্তর মরদেহ রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের হাটজয়পুর গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ভিড় করেন এলাকাবাসী। পরে রাত ১১ টায় বসন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে শান্তকে দাফন করা হয়।