ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত লিবিয়া। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডেরনা শহরে বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা আজ বুধবার পর্যন্ত ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে নিখোঁজ রয়েছে হাজার হাজার জন। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
প্রাণহানির সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামির মতো বন্যায় সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করতে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছে দেশটির উদ্ধারকারী দলগুলোকে।
ডেরনা শহরের দুইটি বাঁধ ও চারটি সেতু ধসে গেছে। এর ফলে গত রোববার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলে ভেসে গেছে শহরের বড় একটি অংশ। রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ আছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আরও বাড়তে পারে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি থেকে একজন চিকিৎসক আহতদের সেবা দিতে ডেরনা শহরে গেছেন। তিনি শহরের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ডেরনায় তিনি ও তার সহকর্মীরা যা দেখতে পাচ্ছেন তাতে তারা স্তব্ধ।
বিবিসিকে চিকিৎসক আনাস বলেছেন, আমরা ওই অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক লাশ পড়ে থাকতে দেখছি। এটি পুরোপুরি একটি বিপর্যয়। আমি সত্যিই হতবাক। তিনি আরও বলেছেন, শহরের লোকজন এত বেশি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত যে তারা কাঁদতে পারছেন না।
কবরে দাফনের আগে অনেকের লাশ রাস্তার পাশে রাখা হয়েছে- যেন তাদের আত্মীয়রা আপনজনের লাশ চিহ্নিত করতে পারে। এই চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, পুরো এলাকা যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
শহরটিতে ইতিমধ্যে অল্প মাত্রায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছে মিশরও। লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ তৎপরতা কিছু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটি এখন দুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত হয়ে আছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইরান, ইতালি, কাতার এবং তুরস্কসহ কিছু দেশ জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে তারাও প্রস্তুত আছে। লিবিয়ায় রোববার অন্ধকারের মধ্যেই করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, শহরের রাস্তায় বন্যার পানিতে ভেসে যাচ্ছে বহু গাড়ি।
অনেক মানুষের সাগরের পানিতে ভেসে যাওয়ার কষ্টকর ঘটনার পাশাপাশি অনেকে আবার নিজেকে রক্ষার জন্য অবস্থান নিয়েছেন নিজ নিজ বাসা বাড়ির ছাদে।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত সরকারের একজন হিশাম চোকিওয়াত বলেছেন, যা দেখেছি তাতে আমি হতবাক। এটা ছিল সুনামির মতো। বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, ডেরনা শহরের দক্ষিণে একটি বাঁধ ধসে যাওয়ায় শহরের বড় অংশ সাগরের পানিতে তলিয়ে গেছে।
আলি দেবিয়াহ নামে আরেকজন বলেন, মৃতদেহ উদ্ধারেও হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। তবে নৌবাহিনী ও ডুবরিরা সাগর থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
বায়দা শহরের সাহায্যকর্মী কাসিম আল কাতানি বিবিসিকে বলেছেন, শহরের প্রধান সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতির শিকার হওয়ায় উদ্ধারকারীদের ডেরনা শহরে পৌঁছানোটাই কঠিন ছিল।