জনবল সংকটে জেলায় জেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। বর্তমানে ১৩ জেলায় নেই কোনো কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী। এছাড়া লোকবল সংকটে ২৬ জেলার কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ভোক্তা অধিকার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একটু একটু করে প্রত্যাশিত সেবাবঞ্চিত মানুষের আশা-ভরসার বাতিঘর হয়ে উঠেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। যেখানে প্রতারিত ভোক্তা প্রতিনিয়ত আসেন প্রতিকার চাইতে, কিংবা কল করেন হটলাইনে অথবা আবেদন জানান অনলাইনে।
এমনই এক প্রভারিত ভোক্তা বলেন, সংস্থাটি বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। কাজেই আমার মনে হয়েছে, আমাকে যদি কেউ আমার বিষয়টি নিয়ে সহায়তা করতে পারে তাহলে তা একমাত্র ভোক্তা অধিকার। এটিই হয়তোবা আমার সর্বোচ্চ জায়গা। কেননা, তারা একদম জায়গামতো গিয়ে কথা বলেন এবং তারা ভোক্তার জন্যই কথা বলেন।
তবে দেশের ১৭ কোটি ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় নিরলস কাজ করা সংস্থাটি সত্যিকার অর্থে কতটুকুই বা দাঁড়াতে পারছেন ঠকে যাওয়া ভোক্তার পাশে। এবিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন,
বগুড়াতে ১২টি উপজেলা। পাশের জয়পুরহাট জেলায় দীর্ঘদিন কোনো কর্মকর্তা না থাকার কারণে আমাকে আবার সেই কার্যালয়ের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে।
শুধু জয়পুরহাট নয়, এরকম ভোক্তার কর্মকর্তা শূন্য ১৩টি জেলায়। এই ১৩ জেলার বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন পাশের জেলার কর্মকর্তারা। মানে ১৩ জন সহকারী পরিচালক দেখভাল করছেন দেশের প্রায় অর্ধেক- ২৬ জেলার ভোক্তার অধিকার। যাদের নিয়মিত হাজির হতে হয় ডিসি, ইউএনও মিটিংয়ে। চালাতে হয় সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বাজার অভিযানও।
যে সব জেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের জনবল শূন্য। (গ্রাফিক ছবি)
সংস্থাটির তথ্য, বর্তমানে ৩৬৬টি পদের মধ্যে খালিই রয়েছে ১৮৭টি। এ অবস্থায় বর্ধিত কার্যক্রম বিবেচনায় ২৪২ জনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করলেও সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দিয়েছে মাত্র ১২ জন।
এবিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন,
আমাদের এই অফিসের স্ট্যান্ডবাই জনবল বাড়ালে আমরা হয়তো বাজার মনিটরিং বা অভিযানগুলো আরও নিবিড়ভাবে করতে পারতাম। আমরা ভোক্তার স্বার্থে আরও বেশি কাজ করতে পারতাম।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ছবি: সময় সংবাদ
এদিকে অধিদফতরটির জনবল সংকট কাটানো উচিত উল্লেখ করে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন,
যেখানে জনবল প্রয়োজন সেখানে জনবল অধিক দেয়া উচিত আর যেখানে কাজ নাই কিন্তু জনবল আছে, সেখানে কাটছাঁট করা দরকার। অবশ্যই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে জনবল বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে সংস্থাটির কার্যক্রম উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়া বোধহয় যৌক্তিক হবে।
জনবলের এই প্রকট সংকটের মধ্যেও গত জুলাই পর্যন্ত ৩৬৫ দিনে ১১ হাজার ৬৭০টি বাজার অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।