২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের এই দিনে তার জন্ম। তিনি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন তিনি শুধু জাতীয় নেতাই নন, তৃতীয় বিশ্বের এক বিচক্ষণ নেতা হিসেবে বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে নিজ ভাবচ্ছবিতে উজ্জ্বল। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত তিন মেয়াদ পূর্ণ করে চতুর্থ মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১/১১-এর পর শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়। জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দী করে রাখা হয়। পরে শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬-২০০১ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তৃতীয় মেয়াদেই ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতার জন্য সারা বিশ্বের অনেক সম্মানজনক পদকে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সমুদ্র জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশও জয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে, বিশ্ববিবেককে। আজ দেশে দেশে তার নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’ হিসেবে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বিচক্ষণতা, ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার বলে ধীরে ধীরে দলের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ফোর্বস সাময়িকী লিখেছে, তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। তিনি বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে তাঁর দল আওয়ামী লীগ সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয় পায়। ফোর্বস আরো লিখেছে, শেখ হাসিনার চলমান সংগ্রামে বাংলাদেশে একটি দৃঢ় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
একজন শেখ হাসিনা শত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁর দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। শেখ হাসিনার সাহস দেশের মানুষ নানা সময়ে দেখেছে। আন্তর্জাতিক অনেক চাপ থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সাহসের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি চতুর্থবারের মতো এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আছেন। শেখ হাসিনা তাঁর চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের বিষয়ে কাজ করছেন। ফোর্বস লিখেছে, ‘শেখ হাসিনার অবিরাম সংগ্রাম বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়ে যাচ্ছে।’ তাঁর এই অর্জনে জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।
লেখক: জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।