শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এ হাট সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। দিন দিন উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাটটি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বাদকরা নেচে-গেয়ে যন্ত্র বাজিয়ে আকৃষ্ট করেন ক্রেতাদের। এ বছরের দুর্গাপূজাতে ব্যতিক্রম হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, বাদ্যযন্ত্রের এ হাটটি জানান দেয় দেবি দুর্গার আগমন বার্তা। মণ্ডপে মণ্ডপে নাচ-গান-আরতি আর দেবী বন্দনা দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। আর ঢাক-ঢোল ছাড়া দুর্গাপূজা যেনও ভাবাই যায়না মজার বিষয় হচ্ছে, হাটের কথা বলা হলেও মূলত এ হাটে কোনো যন্ত্র বেচাকেনা হয় না। বাদকরা তাদের যন্ত্রসহ হাটে আসেন। পূজারিরা তাদের পছন্দের যন্ত্র ভাড়া করেন বাদকসহ। দরদাম শেষে বাদকদের সঙ্গে চুক্তি করে বায়নার টাকা পরিশোধ করে যন্ত্রসহ গন্তব্যে ফিরে যান। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মণ্ডপে বাদ্যযন্ত্র বাজান বাদকরা। তারপর ফিরে যান নিজেদের বাড়িতে।
বাদকরা জানান, হাটে বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি ভালো হচ্ছে। এবার হাটে যন্ত্রের দাম কিছুটা বেশি হলেও একসঙ্গে সব ধরনের যন্ত্র ও বাদক হাতের কাছে পেয়ে ক্রেতারা খুশি। হাটে বাদকসহ প্রতিটি ফোল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ব্যান্ড দল ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় ভাড়া হচ্ছে। অন্যান্য যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দামে।
জনশ্রুতি আছে, ৫০০ বছর আগে রাজা নবরঙ্গ রায় কটিয়াদীর চারিপাড়ায় তার রাজপ্রাসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। রাজবাড়ির পূজায় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ অংশ নিতে খবর পাঠানো হয় বিক্রমপুর পরগনায় বাদকদের কাছে। ওই সময় বাদকরা এসে কটিয়াদী বাজার সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে প্রতি বছর পূজার সময় বিক্রমপুরের বাদকরা ওই স্থানে অবস্থান করে রাজবাড়ির পূজায় অংশ নিতেন। পরে কটিয়াদী বাজারে প্রতি বছর বসতে শুরু করে ঢাকের হাট। সেই থেকে চলছে এই হাট।
সিলেট থেকে হাটে আসেন পরিমল সরকার বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এ হাটে আসি। এবার এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ব্যান্ডের বাজনাসহ ভাড়ায় যাচ্ছি। সহজে বিক্রি হয়ে গেছি। খুব ভালো লাগছে।
নরসিন্দী থেকে রাখাল মোদক তার নাতিকে নিয়ে বাদ্যযন্ত্র কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একজন ঢাকি ভাড়া করেছি। খুব ভালো লাগছে। নাতি হাটে এসে অনেক আনন্দ করেছে।
ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটি সদস্য মধুসূদন সাহা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অনেক ঢাকি চুক্তিবদ্ধ হন মুঠোফোনে। ফলে কিছুটা হলেও হাটের ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এ জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগ নেয়া দরকার। এর মধ্যে হাটে আসা ঢাকিদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের কটিয়াদীর ঢাক-ঢোলের হাট। দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের এ হাট শেষ হচ্ছে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাতে।