বরগুনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের খেজুরতলা মৌজায় নির্মাণ করা হয়েছে এই বাস টার্মিনালটি।
দক্ষিণাঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন এই বাস টার্মিনালটি এখন শুধু বাস কিংবা যানবাহন থামানোর জন্যই জনপ্রিয় নয় দর্শনার্থীদের কাছেও এটি হয়ে উঠেছে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে। চার একর জমিতে গড়ে উঠা এই টার্মিনালটির চারপাশে সুরক্ষা দেয়াল ঘেরা ফুল ও ফলের বাগানের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করছে।
বাস টার্মিনালটির চারপাশে রয়েছে কংক্রিটের তৈরি সুন্দর ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়ের পাশে রয়েছে ফল ও ফুলের গাছের সমাহার। যা দর্শনার্থীদের মনের মধ্যে এক অনন্য আবেশ তৈরি করে। টার্মিনালটি নির্মাণের পর থেকে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে এটি পরিণত হয়েছে বরগুনার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে। শহরে তেমন কোনো দৃষ্টিনন্দন স্থান না থাকায় কর্মব্যস্ত উৎসুক মানুষ সকাল-বিকেল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ভিড় জমিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
বরগুনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়া ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ টাকা ব্যয়ে ৩তলাবিশিষ্ট ফাউন্ডেশনে চার একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় বরগুনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি।
টার্মিনালের ভেতরে রয়েছে ৬৪টি ক্যাপাসিটি বাস পার্কিং সুবিধা, ১৬টি টিকেট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম, কার ওয়াসিংয়ের ব্যবস্থা, উন্নতমানের টয়লেট, ড্রাইভারদের জন্য বিশ্রামাগার, পরিবহন কর্মী, যাত্রীদের খাবার জন্য হোটেল ও মুসুল্লিদের নামাজের স্থান।
সরেজমিন বাস টার্মিনালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বরিশাল ও ঢাকাগামী কিছু বাস থামিয়ে রাখা হয়েছে টার্মিনালটিতে। কিছুক্ষণ পরপর ঢাকা ও বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস। বাস ছাড়ার ফাঁকে যাত্রীরা কেউ কেউ আবার ঘুরে দেখছেন পুরো টার্মিনালটি। যাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সের মানুষ টার্মিনালের চারপাশের ওয়াকওয়েতে হাঁটাহাঁটি করছেন। কেউ কেউ আবার ওয়াকওয়ের পাশে থাকা বিভিন্ন ফুল গাছের সঙ্গে তুলছেন সেলফি।
সেখানে কথা হয় ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। এদের মধ্যে ফয়সাল, রাব্বি, সজিব ও সোলায়মান চার বন্ধু ঘুড়তে এসেছিলেন বরগুনায়। সমুদ্র ও নদীর মিতালী ও বনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পর ফিরে যাচ্ছিলেন ঢাকায়।
তারা বলেন, বরিশাল বিভাগে এতো সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর বাস টার্মিনাল আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। সাধারণত বাস টার্মিনালগুলোতে আমরা দেখি নোংরা পরিবেশ। কিন্তু এই বাস টার্মিনালটি গোছানো। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ফুলের বাগান মুগ্ধ করবে সব বয়সী দর্শনার্থীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, প্রতিদিন বিকেলে আমি এখানে হাঁটতে আসি। মানুষ বাস টার্মিনালের কথা শুনলেই ভাবে নোংরা পরিবেশ। কিন্তু আমাদের এই বাস টার্মিনালটি ব্যতিক্রম। আমরা ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের ড্রাইভার আব্বাস হোসেন বলেন, শুধু বরিশাল বিভাগেই নয় গোটা দক্ষিণাঞ্চলে এরকম আধুনিক বাস টার্মিনাল আর একটিও নেই। এখানে বাস পার্কিং করে আমরা বিশ্রাম নিতে পারি। বাস স্টাফদের যেমন বিশ্রামের জায়গা রয়েছে, তেমনি যাত্রীদের জন্য রয়েছে সুপ্রশস্ত ওয়েটিং রুম। বাংলাদেশ সরকারের যে উন্নয়ন ধারাবাহিকতা তার একটি ক্ষুদ্র সফলের উদাহরণ এই বাস টার্মিনাল। আমরা আশাবাদী শেখ হাসিনার সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতে বেশি সময় লাগবে না।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্বপ্ন দেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। বরগুনা পৌর বাস টার্মিনালটি সেই উন্নয়নের একটি অংশ। তাই আমরা বরগুনাবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বরগুনার পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, বরগুনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি পৌরসভার তত্ত্বাবধায়নে নির্মাণ করা হলেও এটি গোটা বরগুনাবাসীর সম্পদ। এরই মধ্যে বাস টার্মিনালটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ যে, এতো সুন্দর একটি বাস টার্মিনাল আমাদের তিনি উপহার দিয়েছেন।