মসজিদ আরবি শব্দ। অর্থ সিজদার স্থান। আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর ইবাদতে মসজিদে ছুটে আসেন। নামাজ আদায় করেন। নামাজ মুমিনের মিরাজ। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা। নামাজের মাধ্যমেই বান্দা পরিপূর্ণ সফলতা লাভ করে। মসজিদ শুধু নামাজের জন্যই নয়, বরং জিকির-আজকার, কোরআন তিলাওয়াত দীন শেখারও অন্যতম স্থান।
রাসুল সা. মসজিদে নববীকে মাদরাসা হিসেবে তৈরি করেছিলেন। যেখানে দীনের শিক্ষা দেয়া হতো। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, ‘মসজিদ হলো নামাজ, জিকির ও কোরআন পড়ার জন্য।’ (মুসলিম, হাদিস ২৮৫)
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ বন্ধ রাখা ঠিক নয়। আল্লামা ইবনুল হুমাম রহ. বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে ‘মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদান করার অন্তর্ভুক্ত করেছেন’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদগুলো তার নাম নিতে বাধা প্রদান করে সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়।’ (সুরা: বাকারা ১১৪)
পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘যেসব গৃহ (মসজিদসমূহ) সমুন্নত করতে ও যার ভেতর তার জিকির করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল-সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন মানুষ, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত দেওয়া থেকে বিরত রাখে না।’ (সুরা: নুর, আয়াত ৩৬-৩৭) কোরআনও হাদিসের নির্দেশনা হলো ফরজ নামাজের সময় ছাড়াও মসজিদকে প্রয়োজন মোতাবেক ইবাদত, তালিম ও জিকিরের জন্য উন্মুক্ত রাখা।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সবসময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদের মালপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। মানুষের চরিত্রের এতটাই অবক্ষয় হয়েছে, আজকাল মসজিদ থেকেও চুরি করতে ভয় পায় না। মসজিদগুলোতে আগেকার দিনে দামি আসবাব না থাকলেও বর্তমানে এসি ছাড়া মসজিদ নেই বললেই চলে। তাই মসজিদের মালামাল সংরক্ষণ করাও জরুরি।
বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো কোনো ইসলামি আইন বিষেশজ্ঞ নিরাপত্তার প্রয়োজনে নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখাকে জায়েজ বলেছেন। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখার অবকাশ আছে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি নামাজিদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা। মুসল্লিরা যখনই আসবেন যেনো নামাজ আদায় করতে পারেন, সেজন্য মসজিদের একটি অংশ খোলা রাখা আবশ্যক। না হয় গুনাহগার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, জামাত শেষ করার সামান্য পরই মসজিদের মুয়াজ্জিন বা খাদেমরা মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন। এটা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। আর যেখানে নামাজের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়ও ইবাদত ও দীনি তালিমের উদ্দেশে মুসল্লিদের মসজিদে ব্যাপক আসা-যাওয়া থাকে, ওই সব মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
এ জন্য প্রয়োজনে মালপত্র সংরক্ষণ করা ও মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদেম নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো মসজিদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে অন্তত মসজিদের কোনো অংশ অথবা বারান্দা (বাতি-পাখাসহ) খোলা রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
এটাও মনে রাখতে হবে, মসজিদে যেসব দীনি কাজ করা হবে, তা ইসলামের বিধান মোতাবেক হওয়া জরুরি। মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হওয়া আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যেমন ইসলামি শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন করা জায়েজ নয়, তেমনি মসজিদের বৈধ ও স্বীকৃত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করাও ঠিক নয়। (ফাতহুল কাদির ১/৩৬৭; আল বাহরুর রায়েক ২/৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৬; রুহুল মাআনি ১০/৬৫)
আর যারা মসজিদ থেকেও চুরি করে। তাদের শাস্তির ভয় করা উচিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চোরের ভয়াবহ শাস্তির কথা কোরআনে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের সামান্য অংশও জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিও না।’ (সুরা: বাকারা ১৮৮)
চোরের জন্য ইসলামে হাতকাটার শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি। আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা: মায়িদা ৩৮)
হজরত আয়েশা রা. একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, ‘মাখজুম গোত্রের একজন নারীর চুরির ঘটনা কুরাইশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলল। এ অবস্থায় তারা বলাবলি করতে লাগল, এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল সা.-এর সঙ্গে কে আলাপ করতে পারে?
তারা বলল, একমাত্র রাসুল সা.-এর প্রিয় পালকপুত্র উসামা বিন জায়েদ রা. এ ব্যাপারে আলোচনা করার সাহস করতে পারেন। উসামা রা. নবী সা.-এর সঙ্গে কথা বললেন। রাসুল সা. বললেন, তুমি কি আল্লাহর নির্ধারিত সীমালঙ্ঘনকারিণীর সাজা মাওকুফের সুপারিশ করছ?
নবী সা. দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, ‘তোমাদের আগের জাতিগুলোকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোনো বিশিষ্ট লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায়-গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মোহাম্মদ সা.-এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত তা হলে আমি অবশ্যই তাঁর হাত কেটে দিতাম।’ (বোখারি ৩৪৭৫)