ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সুড়ঙ্গগুলোতে সাগরের পানি ঢালতে শুরু করেছে হানাদার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কয়েক সপ্তাহ ধরে এ প্রক্রিয়া চলতে পারে।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে তিনি সরাসরি কিছু বলতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, ইসরায়েল থেকে হামাসের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের কেউ ওই সুড়ঙ্গগুলোতে নেই বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গের যে বিশাল গোলকধাঁধা আছে, সেখানে সম্প্রতি সাগর থেকে সেঁচের মাধ্যমে পানি ঢালতে শুরু করেছে ইসরায়েল।
আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজও পরে একই রকমের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, পানি ঢালার এ প্রক্রিয়া সীমিত আকারে চালানো হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, কৌশলটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের বিশ্বাস হামাস গোষ্ঠী ৭ অক্টোবরের নজিরবিহীন হামলার সময় ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের গাজার ভূগর্ভস্থ টানেলগুলোতে বন্দি করে রেখেছে। পাশাপাশি এসব টানেলে হামাসের যোদ্ধারাও তাদের অস্ত্রশস্ত্রের ভাণ্ডার নিয়ে আত্মগোপন করে আছে। এসব টানেল থেকে বের হয়ে তারা ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আবার সেখানে পালিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ভূগর্ভে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢালার এ কার্যক্রমে গাজার সুপেয় পানির সরবরাহ বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কিছু মার্কিন কর্মকর্তা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এ প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেননি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, গাজার টানেলগুলোকে কোনো জিম্মি নেই বলে শুনেছেন তিনি, কিন্তু খবরগুলো নিশ্চিত করা হয়নি।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মাঝে এক সপ্তাহের ‘মানবিক বিরতি’ চলাকালে কিছু জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। ওই সব জিম্মিদের কয়েকজন জানিয়েছেন, তাদের গাজার টানেলগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, তারা প্রকাশিত এসব ভাষ্য যাচাই করে দেখছে।
গত ১ ডিসেম্বর যুদ্ধের ওই কথিত ‘মানবিক বিরতি’ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে উত্তর গাজা ধ্বংস করা ইসরায়েলে ভূখণ্ডটির দক্ষিণাংশেও তাদের হামলা বিস্তৃত করে। মঙ্গলবার ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো দক্ষিণ গাজার প্রধান শহর খান ইউনিসের কেন্দ্রস্থলে গোলাবর্ষণ করেছে। রাতে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে।
গাজার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাতে বোমা হামলায় খান ইউনিসে দুই শিশুসহ ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
এদিন গাজার মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলা শিশুসহ ২২ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ডিসেম্বরে গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের এই রাফায় আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছিল, এখানে আসলে তারা নিরাপদ থাকবে।