বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

কোটালীপাড়ায় পাল্টেছে ১০ বেদে পরিবারের জীবন

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ৫১ বার পঠিত
Exif_JPEG_420

সাপের খেলা দেখাই, দাঁতের পোকা ফালাই, সিঙ্গা লাগাই’ চিরচেনা এই শব্দগুলো যেন ভুলে গেছেন হামিদা বেগম। একসময় সবাই হামিদা বাইদ্যানী বলে চিনতো। নৌকাই ছিল জীবনযাপনের একমাত্র অবলম্বন। খাওয়া, ঘুম, সংসার সবকিছু হতো নৌকায়। জীবনের এই সবকিছু পাল্টে দিয়েছে সরকারিভাবে পাওয়া আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামে সরকারের দেওয়া চারটি পাকা ঘরে বসবাস করছে বেদে সম্প্রদায়ের ১০টি পরিবার। বেদে হামিদা বেগম এখন এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। তবে এখন আর তাকে কেউ বাইদানী বলে না। স্বামী ও বাপ-দাদার পেশায় এখন পরিবর্তন এসেছে তার। হামিদার ৭ ছেলে-মেয়ের কেউই এখন আর বেদে সম্প্রদায়ের আদি পেশায় নেই।

হামিদা বেগম স্মৃতিচারণ করে বলেন, বেদে বহরের নৌকাতেই জন্ম, নৌকাতেই শৈশব, কিশোরী ও যৌবনকাল কেটেছে। বিয়েও হয় নৌকাতে। দেশের কত জেলায় যে, নৌকায় করে বাবা ও স্বামীর সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। একে একে ৪ মেয়ে ও ৩ ছেলে সবারই জন্ম হয়েছে ওই নৌকোতেই। নিজেদের মাথাগোজাঁর কোন ঠাঁই ছিল না। আজ এখানে তো কাল অন্যখানে থাকতাম।

এখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সরকার আমাগো থাকার জায়গা দিয়েছে। বিল্ডিং করে দিয়েছে। সমাজের অন্য সবার মতো আমরাও এহন গ্রামে থাকি। হাঁস-মুরগি পালি। গাছ-পালা লাগাই। আমি গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ফিতা বিক্রি করি। মাইয়াডা ঘরের পাশেই আনাচপাতি (শাকসবজি) লাগায়, হাস-মুরগি পালে। এহন মোগো সুহের ঘর হইছে।

জানা যায়, ৭-৮ বছর আগে মারা গেছে হামিদার স্বামী শহিদুল ইসলাম ময়না। সবাই তাকে ময়না সর্দার নামে চিনতো। মারা যাওয়ার কয়েক বছর আগে পাঁচটি বেদে পরিবারকে নিয়ে ময়না সরদার আস্তানা গড়েন কোটালীপাড়া-পয়সারহাট আঞ্চলিক সড়কের ঘাঘর ব্রিজের পূর্বপাশে রাস্তার নিচে। সরকারি এই জায়গায় পলিথিনের খুপড়ি ঘর উঠিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা। এখানে থেকেই এই বেদে পরিবারগুলোর ছেলেরা বিভিন্ন গ্রামে ছুটে যেত সাপের খেলা দেখাতে। বয়স্ক পুরুষরা ঘুরতো খালে নদীতে সোনা-রুপা খোঁজার কাজে। মহিলারা গ্রামে গ্রামে ছুটতো দাঁতের পোকা তোলা, সিঙ্গা লাগানোসহ নানা কাজে।

ছয়মাস আগে সরকারিভাবে আধাপাকা টিন সেটের চারটি ঘরে এদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা হিরণ ইউনিয়নের তারাশী গ্রামের স্লুইস গেট সংলগ্ন রাস্তার পাশে এই ঘরগুলো বানানো হয়। এই ঘরগুলোতে ৮টি পরিবার এখন স্থায়ীভাবে বসবাস করনে। বাকি দুটি পরিবার পাশেই খুপড়ি ঘর বানিয়ে পরিবার নিয়ে উঠেছেন। কোটালীপাড়া উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরের আশ্রয়ণের এই ঘরগুলোকে এখন আশেপাশের সবাই বেদে পল্লী নামেই জানে।

দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এখানের একটি ঘরে থাকেন পাফেল মোল্লা। পার্শ্ববর্তী ঘাঘর বাজারে কুলির কাজ শুরু করেন। মাজায় চোট লেগে এখন আর কাজ করতে পারেন না। পাফেলের স্ত্রী সীমা বেগম গ্রামে গ্রামে চুড়ি-ফিতা বিক্রি করে সংসার চালান। পাশাপাশি হাস-মুরগি পালেন। আছে লাউ, কুমড়া, পুঁইশাকের ক্ষেত।

২২ বছরের টসবগে যুবক দিপু। পৌর মার্কেটে কসাইয়ের কাজ করে। কসাই দিপু নামেই পরিচিত। এই বেদে পল্লীতে স্ত্রী পায়েল ও ১ বছর বয়সী ছেলে হাসিবকে নিয়ে থাকেন।

দিপু-পায়েল দম্পত্তি জানান, এখানে খুব ভালো আছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জন্য জায়গা ও ঘর দিয়েছেন। এখানের ভোটার হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে চান তারা।

একসময় স্বর্পরাজ নামে পরিচিত ছিলেন শাজাহান। যেখানেই সাপ দেখা দিতো নিমিষেই সাপকে বশ বানিয়ে খপ করে ধরে ফেলতেন তিনি। এই সাপ দিয়ে হাট-বাজারের খেলা দেখিয়ে কেটেছে জীবনের বেশি সময়। বয়স এখন ৬০ এর মতো। এখন কোটালীপাড়ার এই বেদে পল্লীতে ঠাঁই হয়েছে তার। সঙ্গে থাকেন ৭০ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি ও দ্বিতীয় স্ত্রী ফিরোজা বেগম। স্ত্রী ফিরোজা চুড়ি, ফিতা ও খেলনা সামগ্রী ফেরী করে যে আয় করেন তাই দিয়েই তাদের সংসার চলে।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিম উদ্দিন বলেন, সুবিধাবঞ্চিত বেদে সম্প্রদায়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে তাদের নামে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে আধাপাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। তারাশী গ্রামে বেদেদের জন্য আরো কয়েকটা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তাহলে ওখানে বসবাসের সমস্যা থাকবে না। এছাড়াও সরকারি সব সুবিধা তাদের দেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com