সিটিজেন প্রতিবেদকঃ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেই দিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।
দীর্ঘদিন ধরে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে এসেছে। যদিও আওয়ামী সরকারের পতনের পর বুধবার (১৪ আগস্ট) ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র লেপটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ, সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু তার সব অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের মাধ্যমে সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। তার নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ গঠিত হয়। সে বছরের মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম, ৫২’র রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৮’র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১১ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের আকাক্সক্ষা চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে কলঙ্কমুক্ত হয় বাঙালি জাতি। আজ বঙ্গবন্ধুর ৪৯তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করবে আওয়ামী লীগ। দিবসটি পালনে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়ার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শোক দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে দলীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল এবং ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে কলাবাগান মাঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত মৌন মিছিল।
এছাড়া সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর দেশব্যাপী মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করেছে দলটি। বেলা ১২টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দেশব্যাপী মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। দুপুরে সারাদেশে অস্বচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজনের আয়োজনের কথাও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
শোক দিবস পালনের আহ্বান শেখ হাসিনার : এদিকে গত মঙ্গলবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার মায়ের একটি বক্তব্য প্রকাশ করেন। বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে শোক দিবস পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।