সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

নওয়াব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষকের মধ্যে মারামারির অভিযোগ

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৭৭ বার পঠিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ উত্তরা আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দুই শিক্ষকের মধ্যে গতকালের ন্যায় আজও টিচার্সরুমে মারা মারির ঘটনা ঘটেছে।সরেজমিনে জানা যায়,২৭ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ৭.২০ মিনিটের সময় টিচার্স রুমে এ ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় রকিব লিখন মাথাও কপালে আঘাত পেয়ে আহত হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে ছয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। মিরাজের এলোপাতাড়ি কিল ঘুষিতে মারাত্মক আহত রকিব লিখন বলেন,তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন,সাজ্জাদ হোসেন,হারুনুর রশিদ,ওসমান গণি ও বাহাদুর হোসেন ইন্দন দিয়ে তাকে মার খাওয়াইছে। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষকরা জড়িত নন বলে তারা জানায়।
মারপিটের ঘটনায় খণ্ডকালীন প্রভাষক মিরাজের বিরুদ্ধে সিনিয়র শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠায় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কলেজ সুত্রে জানা যায় গত কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য মিরাজকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মির্জা মাহমুদা। শিক্ষানীতিতে বলা আছে, শিক্ষাঙ্গনে সরকারি বিধি অনুযায়ী কাউকে বল প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। জোরপূর্বক কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা ও যাবে না,তবে ন্যায়সংগত অভিযোগ থাকলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। এছাড়াও ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে সু- সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কয়েক দিন পর পর ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মারামারির এমন ঘটনায় অভিবাবক মহল ক্ষুব্ধ। জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ যাবত বিভিন্ন ই্যসুতে শিক্ষকদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসময় অভিবাবকেরা বলেন, ক্ষমতা ও চেয়ার দখলকে কেন্দ্র করে এই প্রতিষ্ঠানে যে কোন সময় খুন খারাবিসহ বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। এছাড়াও নওয়াব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষানীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া আইন না মেনে সার্টিফিকেট জাল-জালিয়াতি করে চাকুরী নেওয়ার ও অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার টেবুলেশন শীটে জালিয়াতি করে ভূয়া টেবুলেশন শীট বানানো,শিক্ষক নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উল্লেখিত পদসংখ্যার চেয়ে বাংলায় ও অর্থনীতিতে বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া, নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই ব্যাক্তিগত সুবিধা নিয়ে এক জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া, কলেজ শাখায় প্রভাষক নিয়োগের সময় বোর্ড থেকে ডিজি প্রতিনিধির মনোনয়ন না নিয়ে জাল- জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কাগজ বানানো,গণিতে মেধা তালিকায় ১ নাম্বার সিরিয়ালে থাকা শিক্ষককে বঞ্চিত করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে ২য় জনকে এমপিওভুক্তি করণ, এমপিও ভুক্ত শিক্ষক না হয়েও শিক্ষানীতিকে না মেনে ব্যক্তিগত স্বার্থে হারুনুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।
একাধিক সুত্রে আরো জানা যায়, সার্টিফিকেট জাল-জালিয়াতি ও নানাবিধ অপকর্মের এসব ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সমর্থিত কয়েকজন প্রভাবশালী প্রভাষক জড়িত। একাধিক সুত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে বাংলা বিভাগ, ইংরেজী বিভাগ,ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা,হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ, উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিত বিভাগের কয়েকজন প্রভাষক জড়িত রয়েছে। জানা যায়,ছাত্র- জনতার আন্দোলনে সহযোগিতা না করে এসব অসাধু শিক্ষকগণ বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহ পালিত হয়ে কাজ করেছে। বর্তমানে ঐ স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকেরা লেবাস পাল্টিয়ে স্কুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।তাদের এহেন অবৈধ কাজকর্মে সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি নষ্ট হতে চলেছে । অভিবাবক ও শিক্ষার্থীদের সুত্রে জানা যায়,শ্রেণি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারণে গত ২০/০৯/২০২২ ইং তারিখ দিবা শাখার সহকারী অধ্যাপক বাহাদুর হোসেন ক্লাস চলাকালীন সময়ে ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বেদম মারধর করে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গুরুতর আহত হয়। এঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে গত ১৬/১১/২২ ইং তারিখ ভিক্টিম মোঃ লাজু আহমেদ, সি এম এম আদালতে শিশু আইন,২০১৩ এর ৭০ ধারায় মামলা করে। ঐ সময় প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য ও শ্রেনীকক্ষে শিক্ষার্থীদের মারধর ঘটনায় কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ইংরেজি বিভাগের খন্ডকালি শিক্ষক বাহাদুর হোসেনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।সে সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রাব্বানীকে ম্যানেজ করে কলেজে ফিরে আসেন । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিবাবক জানায়,উত্তরার সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন হিংস্র শিক্ষকরা “শিক্ষা আইন”কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইয়া শিক্ষা সনদ জাল করে কি ভাবে এখনো চাকুরীতে বহাল তবিয়্যতে রয়েছে। একাধীক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সুত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল আনুঃ ৭.২০ মিনিটের সময় নওয়াব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ১০০৬ নং টিচার্স রুমে ড্রয়ারে ব্যাক্তিগত মালামাল রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে খন্ডকালীন প্রভাষক মিরাজ তার সিনিয়র “সহকারী অধ্যাপক” রকিব লিখনকে অপমান অপদস্ত ও মারধর করে। জানা যায়,সহকারী অধ্যাপক রকিব লিখনকে রবিবার ও সোমবার সকালে মারধর করে মাথা কপালে নিলা ফুলা জখম করার ঘটনায় নওয়াব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
স্কুল ও কলেজ শাখার কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়,গত ৫ই অক্টোবর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ও তাদের কয়েক জন দোসর এখনো এ কলেজে বহাল রয়েছে।তারা বিভিন্ন ভাবে শিক্ষাকদেরকে নাজেহাল করা শুরু করছে। তাদের সার্টিফিকেট জাল জালিয়াতির গোমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে বিভিন্ন অজুহাতে স্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষদের স্কুল থেকে তারানোর পায়তারা করছে। তাদের অত্যাচারে শিক্ষক সমাজ আতংকিত।টিচার্স রুমে মারামারির বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক রকিব লিখন বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি স্কুল বন্ধুদের সাথে সখিপুর গিয়েছিলেন।রবিবার সকাল ৯ টার সময় কলেজের সমম্বয়ক কমিটির বিষয়ে জানতে ইংরেজি প্রভাষক হারুনুর রশিদের সাথে কথা বলতে রুমে গেলে খণ্ডকালীন প্রভাষক মিরাজ তাকে উল্টো পাল্টা কথা ও গালাগালি শুরু করেন। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায় উত্তেজিত হয়ে মিরাজ হোসেন তাকে চেয়ার দিয়ে মারতে আসে এবং তার গায়ে ধাক্কা দেয়। এসময় তিনি আরো বলেন গতকালের ঘটনা ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য শিক্ষকরা জেনে ফেলায় আজ সকাল ৭.২০ মিনিটের সময় মিরাজ হোসেন তাকে টিচার্স রুমে আবারও গালাগালি শুরু করে। এসময় তাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি মারে। সিনিয়র শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে আজও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে গতকালের ঘটনা রাতে তিনি প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন লোক থাকার কারণে মারতে পারেনি, তবে আবার মারার সুযোগ পেতে পারেন তিনি।
সরেজমিনে নওয়াব হাবিবউল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ গিয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে টিচার্স রুমে মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মির্জা মাহমুদা বলেন, এসময় তিনি কলেজে ছিলেন না, মারামারির খবর পেয়ে কলেজে ছুটে আসেন। খন্ডকালীন প্রভাষক মিরাজ হোসেন ও সহকারী অধ্যাপক রকিব লিখনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় মিরাজ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মাত্র এক মাস হলো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছি। আগের অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়া চলে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন দীপ্তি চক্রবর্তী। সে সময় তিনি স্কুল ড্রেস বানাতে গিয়ে অনেক বেশি টাকা বাউচারের মাধ্যমে নিয়ে যায়। উক্ত অনিয়মের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করেন। বিষয়টি তারা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এসময় তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তিনি অনেক চাপের মধ্যে আছেন, শিক্ষানীতি মানছে না কেউ, কারো নির্দেশনা কেউ মানে না ফলে ঠিক মতো কাজ করতে পারি না।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com