নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতা প্রকাশ পাওয়ায় এবার বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে সামলানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের একটা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে অপসারণ করা যায়। এই বিষয়ে তারা তাদের পয়েন্ট তুলে ধরেছে, আমরা আমাদের পয়েন্ট তুলে ধরেছি। একটা আলোচনা হয়েছে, কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রথম বৈঠক করেছে বিএনপির সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের একটি দল ওই রাতে ঢাকার গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় যায়। পরে সেখানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও যোগ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ওই বৈঠকে দুই সংগঠনের নেতারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সরানোর দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দালিলিক প্রমাণ নেই বলে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন, এরপর তিনি রাষ্ট্রপতির পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ওই বক্তব্যের পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। সে জন্য তারা আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝাতে চাইছেন।
ওই বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের প্রতি বিএনপির কোনো সহানুভূতি নেই; কিন্তু তাকে সরানোর চেষ্টার পেছনে অন্য কোনো বিষয় আছে কি না, অথবা সরানোর পর কী পরিস্থিতি হতে পারে, এসব বিষয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপিতে।
এ ছাড়া ২৩ অক্টোবর সালাহউদ্দিন আহমেদসহ দলটির শীর্ষ পর্যায়ের তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করার কথা বলেছিলেন। দলটি মনে করে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটা বিএনপি চায় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির দুই নেতা তাঁদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি ছাত্রনেতাদের এ–ও বলেছেন, তাঁরা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে ছাত্রনেতাদের দাবি ও বক্তব্যগুলো জানাবেন।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
নীতিগতভাবে একমত জামায়াত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গতকাল শুক্রবার বৈঠক করেন জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতার সঙ্গে। মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও হামিদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সাহাবুদ্দিনকে সরানোর বিষয়ে ছাত্রনেতৃত্বের দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে একমত বলে জানায়। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন করার পক্ষে মত দেয় দলটি।
রাষ্ট্রপতির অপসারণ এবং তারপর কী করণীয় হবে, এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সমাধান করতে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি। সে কথা তারা বৈঠকে জামায়াত নেতাদের জানিয়েছেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
বিএনপির সঙ্গে যারা বৈঠক করেছিলেন, তাদের মধ্যে সারজিস আলম ছাড়া বাকিরা জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা পাঁচ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একটি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছি। আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য তৈরি হওয়ার পর আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাব।
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত বুধবার বিএনপির তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা সৃষ্টি না করার মত দেন। এরপর বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। একজন উপদেষ্টা জানান, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পক্ষে নয়। ছাত্রনেতৃত্বও চাপ বাড়াচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জটিলতা বাড়তে পারে বলে সরকার মনে করছে। সে জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই এর সমাধান খোঁজার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি বিএনপি ও জামায়াতের পর পর্যায়ক্রমে ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ছাত্রনেতাদের অনেকে মনে করছেন, তাদের দাবির পক্ষে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমরা যা বুঝতে পারলাম, রাষ্ট্রপতিকে সরানো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু পরবর্তী প্রক্রিয়া, দেশে যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে; সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সরানো বা সংবিধান পরিবর্তনের আলোচনা কীভাবে এগোনো যায়, সেটি নিয়ে আরও আলোচনার অবকাশ আছে। সে জন্য হয়তো আমাদের আরও সময় নিতে হবে; কিন্তু আলোচনার অগ্রগতি ইতিবাচক।