বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

উত্তরায় কমছেনা অবৈধ গ্যাস সংযোগ; গ্রাহকদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪ বার পঠিত

উত্তরা সংবাদ দাতা :  রাজধানী উত্তরার নতুন ওয়ার্ড গুলোতে গ্যাস সংকট দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থানীয়রা জানান, এখানকার অবৈধ ওয়াস ফ্যাক্টরী ও কল কারখানায় রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।এর ফলে বাসাবাড়িতে দিনে ২ ঘন্টা রাতে দুই ঘন্টা করে মোট ৫ ঘন্টার বেশি গ্যাস থাকে না। লাইনের গ্যাস না পাওয়ায় এখানকার গ্রাহকরা চরম বিপাকে।
আবার কখনো কখনো সারা দিন ও তিতাস গ্যাস গ্রাহকরা আবাসিক সংযোগ থেকে গ্যাস পায় না।
সরেজমিনে দেখা যায়,গতকাক দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটের সময় উত্তরখান মিয়াবাড়ি তালতলা এলাকার এক গৃহিণী এবং রাত ১২ টার সময় ২ দফায় চুলায় আগুন জ্বালাতে চাবি চালু করে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু লাইনে গ্যাস না থাকায় বার বার চেষ্টা করে ও সে আগুন জ্বলাতে পারেনি। জানা যায়, এমন ঘটনা দীর্ঘ এক বছর যাবত উত্তরার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত আবাসিক সংযোগে তিতাস গ্রাহকরা গ্যাস না পাওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বৃহত্তর উত্তরা এলাকার লাখ লাখ মানুষ। প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত, আবার রাত ১১-১২ টার পর থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত এ ভাবে লাইনে গ্যাস আসে এবং যায়। গত কয়েক বছর যাবত উত্তরার নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়িতে চলছে গ্যাসের চরম সংকট।

ভোক্তাদের গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা প্রতিশ্রুতি দিলে ও বার বার ব্যার্থ হয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়,গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিতাসগ্যাস আওতাধীন এলাকা ঢাকার কেরানীগঞ্জ,সোনারগাঁও, এনায়েতপুর,চন্দ্রা,কোনাবাড়ী, সাভার আশুলিয়া ময়মনসিংহ,ভালুকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও আবাসিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় কয়েক কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ করেন। এর ফলে দিনে লাখ লাখ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়।
যার মূল্য কয়েক দশ লক্ষাধীক টাকা।

দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত উত্তরা এলাকায় গ্যাসের চরম সংকট থাকলেও এই এলাকায় তিতাসের অভিযান এখনো দেখা যায় নি। স্থানীয়রা জানান, তিতাসগ্যাস কম্পানীর অসাধু কিছু কর্মকর্তার সাথে আতাঁত করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালিকেরা তাদের চাহিদা মেটাতে গ্যাস পাইপের মুখে শক্তিশালী রাইজার বসিয়ে অবৈধ পন্থায় গ্যাস টেনে নিয়ে যাচ্ছে।এর ফলে উত্তরখান দক্ষিণখান তুরাগসহ উত্তরার বাসাবাড়িতে দিন-রাত যোগ করে ৫ ঘন্টার বেশি গ্যাস সরবরাহ থাকে না। প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ ঘন্টা উত্তরখান-দক্ষিনখান,
খিলখেত-ডুমনি, তুরাগ বাউনিয়া এলাকায় লাইনে গ্যাস থাকেনা। এর ফলে এখানকার প্রায় ১০ লাখ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে গত ৫ই আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে সারা দেশে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।
স্থানীয়রা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া নানান উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, তিতাসগ্যাস কম্পানীর অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনো সরকার কেন ব্যবস্থা নেয়নি এবিষয়ে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা আরো বলেন,বাজারে রয়েছে নামে বে-নামে ৬-৭ টি সিলিন্ডার গ্যাস কম্পানী। লাইনে গ্যাস সরবরাহ না থাকলে বাধ্য হয়ে মানুষকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হবে,এমন কারসাজি করে বেশী মুনাফার আশায় এসব সিলিন্ডার গ্যাস কম্পানীর সাথে আতাঁত করে ও তিতাস গ্যাস কম্পানীর অসাধু কিছু কর্মকর্তা।
সরেজমিনে উত্তরার বিভিন্ন এলাকা গিয়ে দেখা যায়, এখানকার বেশির ভাগ মানুষ গার্মেন্টস কর্মী, অটোরিকশা চালক ও চাকুরজীবী। প্রতিমাসে সরকারী বিল ১০৮০/- (একহাজার আশি) টাকা পরিশোধ করে তার উপর বাড়তি ১৫০০/- টাকা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে এখানকার বাসিন্দারা অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এ দিকে পেট্রোবাংলা কোম্পানীর তিতাসগ্যাস কর্তৃপক্ষের উত্তরার বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকটের দিকে তাদের নজর নেই বল্লেই চলে।
এসময় এখানকার গৃহবধূরা গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে উঠে, আবার কেউ কেউ অন্তরবর্তীকালীন সরকারের সমালোচনাও করেন।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, রাজধানীর অন্যতম ঘনবসতি এলাকা উত্তরখান হযরত শাহ কবির মাজার চৌরাস্তা ,কাঁচকুড়া, মাউসাইদ,আটিপারা, দক্ষিণখান,কোটবাড়ি, মোল্লারটেক, হলান, কাওলা,আসকোনা,ডুমনি, নিকুঞ্জ, খিলখেত এলাকায় ভোর ৫ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত লাইনে গ্যাস থাকে না। এছাড়াও হরিরামপুর, তুরাগ, দলিপাড়া,কামারপাড়া,
বাউনিয়া ও নলভোগ এলাকায় প্রতিদিন দুপুর ২ টার পর অল্প সময়ের জন্য লাইনে গ্যাস দিলেও প্রয়োজনের তুলনায় গ্যাসের চাপ থাকে অনেক কম। কখনো কখনো সন্ধ্যা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত লাইনে গ্যাস থাকেনা।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে দেশের প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন আসলেও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে সারা দেশেরন্যায় উত্তরার বাসা বাড়িতে চলছে গ্যাসের চরম সংকট। নিরুপায় হয়ে প্রয়োজন মিটাতে তারা সিলিন্ডার গ্যাস ও ইলেক্ট্রিক চুলার দিকে ঝুঁকছে।গ্যাসের অভাবে এখানকার গৃহীনিরা রান্না করতে পারছেনা,গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে চলছে চরম হাঁ হাঁকার।
দীর্ঘ দুই বছর যাবত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে উত্তরার নতুন ওয়ার্ডের বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ অনেক কম। জানা যায়, এখানকার ফ্ল্যাটবাড়ির বেশির ভাগ বাসায় গৃহবধুরা ইলেক্ট্রিক চুলায় রান্না করছেন।
এছাড়াও গ্যাসের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত বসে থাকতে থাকতে অনেক গৃহীনি অসুস্থ হয়ে উঠেছে।দক্ষিণখান আজমপুর কাঁচাবাজার এলাকার গৃহিণী লিপি আক্তার ও লামিয়া, ট্রান্সমিটার এলাকার বাসিন্দা স্বপন, উত্তরখান মিয়াবাড়ি তালতলা এলাকার বাসিন্দা কল্পনা আক্তার, দলিপাড়া এলাকার গৃহবধূ স্বর্না, নয়ানগর এলাকার স্বপন ও আলম,কাওলা এলাকার রোমানা বলেন,গত কয়েকদিন যাবত ভোর ৫ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত লাইনে গ্যাস থাকে না। আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্যাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে মাথা গড়ম হয়ে যায়। এসময় তারা আরো বলেন, আমরা গরীব মানুষ, যে বেতন পাই কোন মতে সংসার চালাই, গ্যাস সিলিন্ডার কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। লাইনে গ্যাস আসার অপেক্ষায় প্রতিদিন রাত জেগে থাকতে হয়।
এ সমস্যা থেকে তারা মুক্তি চায়।
এ সংকটের কারণে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে উত্তরখান দক্ষিণখান খিলখেত নিকুঞ্জ তুরাগ হরিরামপুরের লাখ লাখ মানুষ।
এলাকার স্থানীয়রা বলেন,একদিকে সড়কের চলমান উন্নয়ন কাজের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্ত ও বৃষ্টির পানি জমে এখানকার নাগরিক জীবন প্রায় অচল।
প্রায় দশ লক্ষ লোকের বসবাস ঢাক-১৮ আসনের অন্তর্গত ডিএনসিসির নতুন ১৮ টি ওয়ার্ডে। দীর্ঘ দিন যাবত অবহেলিত উত্তরখান, দক্ষিণখান, হরিরামপুর ও ডুমনি এলাকার নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে অপরিকল্পিত খোড়াখুঁড়ি ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নতুন করে গ্যাস ও পানি সংকট যুক্ত হওয়ায় মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এ সংকটের কারণ হিসেবে এখানকার বাসিন্দারা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। তারা আরো বলেন, তিতাস গ্যাস ট্রাসমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র কর্মকর্তারা এলাকার শতাধিক অবৈধ ফ্যাক্টরীতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, এখানকার ফ্যাক্টরী গুলোতে দেয়া অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন হলেই এলাকার গ্যাস সংকট দূর হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বেকারি,ওয়াস, ডায়িং ও ছোট বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী। এখানকার স্থানীয় বাড়ির মালিকগণ বলেন, ব্যাঙের ছাতার মত আবাসিক এলাকায় এলোপাথাড়ি ভাবে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরী গুলোতে দিনে রাতে গ্যাস সরবরাহ থাকলেও এলাকার বাসা বাড়িতে সকাল থেকেই আমরা গ্যাস পাই না।
গ্যাস সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এখানকার স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী , নিম্ন আয়ের মানুষ।
এ বিষয়ে তিতাস ট্রাস্টমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর কর্মকর্তারা বলেন,উত্তরার ডুমনি, খিলখেত তুরাগ, কামারপাড়া, উত্তরখান মাজার,হেলাল মার্কেট, চানপাড়া ও দক্ষিণখান হলান, মোল্লাবাড়ী এলাকার বেকারি, ওয়াস এবং ডায়িং ফ্যাক্টরীগুলোতে খুব শীঘ্রই অভিযান চালাবে তারা। অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য পেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ মালামাল জব্দ করা হবে সে সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিন লাইন থেকে চুরি করে গ্যাস টেনে নেওয়ার ফলে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকার নতুন ওয়ার্ড গুলোতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবৈধ ছোট বড় নানান ফ্যাক্টরী। এ সব ফ্যাক্টরীর ময়লা পানিতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও তুরাগ নদীর পানি।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আলী আকবর বলেন,নতুন ওয়ার্ড গুলোকে ঢেলে সাজাতে মেঘা প্রকল্পের কাজ চলছে। যে সব ফ্যাক্টরীতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভুগিরা জানান, পেট্রোবাংলা কোম্পানীর তিতাসগ্যাস কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেট ভেঙে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন ও জরিমানা করলে উত্তরার বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট কেটে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com