আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাশিয়াকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউরোপের সেনাবাহিনী গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা মোকাবিলায় ইউরোপের নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্তব্যটি করেন তিনি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপ মহাদেশের সাহায্যে নাও এগিয়ে আসতে পারে এমন ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে “ইউরোপের সেনাবাহিনী” তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে— ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে পুরোনো সম্পর্ক “শেষ হয়ে যাচ্ছে” এবং ইউরোপ মহাদেশকে এখন “এই বিষয়টির সাথে মানিয়ে নিতে হবে”।
তিনি আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি আলোচনা শুরু করতে সম্মত হলেও “আমাদের বাদ দিয়ে আমাদের পেছনে করা চুক্তি কখনোই মেনে নেবে না” ইউক্রেন।
গত বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারের এই ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিষয়ে আর কোনও বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়নি তবে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে “… সংলাপ পুনঃস্থাপনের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করেছে”।
এর আগে এই সপ্তাহের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের মাধ্যমে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে প্রায় তিন বছরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটে। এছাড়া শনিবার ইউক্রেনে ট্রাম্পের বিশেষ দূতও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেই আলোচনায় ইউরোপ অংশ নেবে না, তবে ইউরোপের সাথে পরামর্শ করা হবে।
ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াতে পারে এমন মন্তব্যও করেছেন কিথ কেলগ। তিনি বলেছেন, আগের আলোচনা ব্যর্থ হয়েছিল কারণ অনেক পক্ষ সেই আলোচনায় জড়িত ছিল।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া— চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।
এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ। অবশ্য যুদ্ধরত এই দুই দেশের কেউই তাদের নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ না করলেও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হতাহতের সংখ্যা কয়েক লাখ বলে অনুমান করছে।