জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতার জন্য এমপিদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সদস্যদের বিভিন্ন ফলমূল ও স্ন্যাকস নিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বৈঠকে জনপ্রতি আপ্যায়ন খরচ ১০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও চলতি বাজেটে তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে।
জানা গেছে, এমপিদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ফিশ কাটলেট, কাজুবাদাম, কেক, সিঙ্গারা, সমুচা, স্যান্ডইউচ, মৌসুমি ফলমূল ও চা।
২০ আগস্ট (বুধবার) সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের জন্য একটি নাশতার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সংসদের সিনিয়র সহকারী সচিব শওকত আকবর আলী স্বাক্ষরিত ৬০ জনের জন্য নাশতার ছক করা হয়েছে। সেই ছক থেকে জানা যায়, প্রিঞ্জেল চিপস, ভেজিটেবল রোল, পেয়ারা স্লাইস, চা (টি ব্যাগ), পানি (৫০০ মিমি) দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে।
এর আগে এ কমিটির চতুর্থ বৈঠক হয়েছিল রমজান মাসে। সেদিন তারা ইফতারি আইটেমের পাশাপাশি আপেল (সবুজ), খেজুর (উন্নতমানের) ও লিচু (উন্নতমানের) নিয়ে ইফতার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সচরাচর পর্যটন কর্পোরেশনের ফিশ কাটলেট, সমুচা, সিঙ্গারা ছাড়াও মুড়ি ও ছোলা বুট থাকে। এছাড়া প্রতিবারের আইটেম হিসেবে মৌসুমি ফল, পানি ও চা তো আছেই। এছাড়া মাঝে মাঝে স্যান্ডইউচও দেয়া হয়।
জানা যায়, ছয়টি সংসদ ও এমপি-সংক্রান্ত কমিটি ছাড়াও ৪৪টি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৫০টি সংসদীয় কমিটি রয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে গড়ে ১০ জন করে সদস্য রয়েছেন। কিন্তু বৈঠকের সময় মন্ত্রণালয় ও সংসদের কর্মকর্তাসহ ৬০ জনের মতো উপস্থিত থাকেন।
জানা যায়, সংসদীয় কমিটির সভাপতিরা তাদের কার্যালয়ে আপ্যায়ন খরচ বাবদ চলতি অর্থবছর থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। গত বছর তা ছিল ১২ হাজার।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের সহকারী সচিব ফারহানা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিগত দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সংসদীয় কমিটিগুলো তিন হাজার ২২৫টি বৈঠক করেছে।
সংসদ সদস্য (পারিতোষিক ও ভাতাদি) আদেশ, ১৯৭৩ (মে ২০১৬ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী, একজন এমপি সংসদীয় কমিটিতে উপস্থিত থাকলে যাতায়াত বাবদ কিলোমিটার (সড়ক পথে) প্রতি ১০ টাকা করে পান। এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার সময় যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয় সেই ঠিকানা অনুযায়ী তারা যাতায়াত ভাড়া পান। যে এলাকা থেকে তিনি নির্বাচিত হন, সেই এলাকার ঠিকানা শপথের সময় ব্যবহার করা হয়।
সংসদের হিসাব শাখা জানায়, বৈঠকে উপস্থিতির জন্য গড়ে দুই হাজার টাকা করে তুলেছেন এমপিরা। গড়ে ছয়জন করে উপস্থিতি ধরে এতগুলো বৈঠকের যাতায়াত বাবদ সংসদের খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বৈঠকে হাজিরার জন্য এমপিদের এক হাজার করে টাকা দেয়া হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী, গড়ে ছয়জনের পেছনে খরচ হয়েছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রতিটি বৈঠকে এমপিরা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, সংসদের কর্মকর্তাসহ ৬০ জনের নাশতা নির্ধারিত থাকে। নাশতা বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা বরাদ্দ হিসাবে প্রতিটি বৈঠকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। সেই হিসাবে গত পাঁচ বছর নাশতার পেছনে খরচ হয়েছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সংসদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন খরচ মিলে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে হিসাব শাখা জানায়।