আন্তর্জাতিক ডেস্ক,সিটিজেন নিউজ: মাত্র বেচাকেনা জমে উঠেছে। ক্রেতারা ভিড় করছে দোকানে। ঠিক এই মুহূর্তে কোনো এক ওয়াক্তের আজান। কোনো কথা নেই, দুমদাম দোকানের শাটার টেনে দিতে হবে। যত ক্রেতাই থাকুক না কেন, কিংবা ব্যবসা লাটে উঠলেও এই নিয়মের ব্যত্যয় নেই।
ঠিক এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই যেতে হয় সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের। নামাজের সময় দোকান বন্ধ রাখার বিষয়ে আইন চালু করা হয়েছিল দেশটিতে। যে আইনে ছিল, নামাজের সময় দোকান খোলা থাকলে তিন দিনের জেল খাটতে হবে।
তবে ‘কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ভাতা প্রদানের বিনিময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যাবে’ এই মর্মে গত মাসে নতুন এক নির্দেশনা জারি করেছে সৌদি সরকার। সৌদি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে নামাজের সময় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এরই প্রেক্ষিতে সৌদি সরকার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, চাইলে নামাজের সময়ও দোকানপাট চালু রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে কিছু টাকা দিতে হবে। তবে এ নির্দেশনা জারির প্রথম দিকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পাবে কিনা এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
দেশটির বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্দেশনার মাধ্যমে যদি নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার আইন উঠে যায়, তাহলে এটি সৌদি আরবের রক্ষণশীল পরিবেশে একটি উদার সংস্কার বলে বিবেচিত হবে। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সৌদি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
রিয়াদের কিংডম সেন্ট্রাল মলের একজন বার্গারের দোকানের মালিক এএফপিকে একটা চিঠি দেখান, যেটা সৌদি কর্তৃপক্ষের পাঠানো। ওই চিঠিতে লেখা, দোকান, রেস্টুরেন্ট ও মার্কেটগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত নামাজের সময়গুলোতেও বহাল থাকবে।
এটি ছিল রিয়াদের কিংডম সেন্টার মলের মুষ্টিমেয় খাবার দোকানগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে মাগরিবের নামাজের সময় অনেকে খেতে আসেন।
আল নাখিল নামে রিয়াদের আরেকটি মলের দৃশ্যও এমন। সেখানে কয়েকটি দোকানে এশার নামাজের সময় কিছু মানুষ খেতে আসেন। ওই মলের এশিয়ান কফি শপের ম্যানেজার ফ্রান্সিস বলেন, এখানকার দোকানগুলো বেশিরভাগ নামাজের সময় খোলা থাকে।
আরও দুটি দোকানের ম্যানেজার বলেন, নামাজের সময় দোকান খুলে রাখতে সরকারকে কোনো টাকা দিতে হয় না। যার ইচ্ছা হবে দোকান বন্ধ করে নামাজে যেতে পারবে, যার ইচ্ছা হবে না সে যাবে না।
তবে নামাজের সময় দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে দুইটা শ্রেণি তৈরি হয়েছে। যারা নামাজের সময় অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা দোকানপাট খোলা রাখার পক্ষে তারা বলছেন, এতে সার্বক্ষণিক বাজার করার লোকদের সুবিধা হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসা বাড়বে।
এদিকে এই পদক্ষেপের বিরোধীরা বলছেন, নামাজের সময় দোকানপাট খোলা রাখা হলে সারা পৃথিবীর মুসলিম জাতির পরিচয়ের ওপর কঠোর আঘাত আসবে।
সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম বলছে, নতুন এ নির্দেশনার ফলে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বাবদ ১ লাখ রিয়াল খরচ করতে হবে, যার পরিমাণ প্রায় ২৭ হাজার মার্কিন ডলার।
তিন বছর আগেও সৌদি আরবের পুলিশরা নানান ভয় দেখাতো, নামাজের সময় পুরুষদেরকে মল থেকে বের করে দিতো এবং বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে মেলামেলা করতে দেখলে মারধর করতো। কিন্তু সম্প্রতি এগুলো আর ঘটছে না।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় বসার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। দেশকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রসারে ইতোমধ্যেই অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া যুবরাজের কথিত ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে দেশের শ্রমবাজারে নারীদের সম্পৃক্ত করতেও বিধিনিষেধে সংস্কার আনা হচ্ছে। এই ভিশনের অংশ হিসেবেই দেশটির সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানি আরামকোতে সম্প্রতি একজন নারী উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যেই চলচ্চিত্র শিল্প এবং নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এমনকি সরকারের আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগের নিয়ম অনুসরণ করে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত রাখা হয়নি। যুবরাজের এমন সংস্কার সিদ্ধান্তে দেশটির অভ্যন্তরে সমালোচনাও চলছে বেশ।