অনলাইন ডেস্ক, সিটিজেন নিউজ: বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও পর্যটন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় মালয়েশিয়া।
ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানান মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আমির ফরিদ বিন আবু হাসান। শনিবার ৩১ আগস্ট দেশটির ৬২তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে মালয়েশিয়ার হাইকমিশন।
আমির ফরিদ বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত মালয়েশিয়ার অনেক কোম্পানি এ দেশে পা রেখেছে।’
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির কথা স্বীকার করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ সম্পর্ক উন্নয়নে দু’পক্ষের মধ্যে নানা ধরনের কার্যক্রম চালু রয়েছে।’
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে চলতি বছরের জুলাইয়ে কুয়ালালামপুরে ‘শোকেস বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
‘এ ঘাটতি দূর করতে বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করা হবে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যবসা বাংলাদেশে আসছে,’ বলেন আমির ফরিদ।
ভারপ্রাপ্ত এ হাইকমিশনার বলেন, ‘উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে যাওয়া মালয়েশিয়া মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করছে। এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে চাই।’
তিনি জানান, ‘বিগত বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মোট বাণিজ্য ছিল ২.৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৫.৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রফতানি ছিল মাত্র ২.৬০ মিলিয়ন ডলার।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ৯২.৭৪ মিলিয়ন ডলার।
মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘দুই দেশের সরকারের পাশাপাশি জনগণের মধ্যেও উচ্চ সম্পর্ক বিরাজ করছে। খাদ্য, আবহাওয়া এবং কিছু কিছু সংস্কৃতিতে মিল থাকায় দুই দেশ এ সুবিধা পাচ্ছে।’
২০১৮ সালে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার ২২তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত এ হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার প্রধান রফতানির মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক পণ্য, ধাতু, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, পাম তেল, কৃষি এবং বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিক পণ্য। ভোক্তা পণ্য, নির্মাণ সেবা, ইসলামী ব্যাংকিং, তেল, গ্যাস ও স্বাস্থ্যসেবাসহ আরও অনেক কিছু বাংলাদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে।’
তিনি জানান, বাংলাদেশি পর্যটক এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহিতাদের জন্য মালয়েশিয়া পরিণত হয়েছে। গত বছর দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ করেছেন।’
আমির ফরিদ বলেন, ‘উচ্চ মানের সেবা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে মালয়েশিয়া চিকিৎসা পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সফর নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়ে উঠছে।’
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার জন্য বাংলাদেশের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়া দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম ছিল।
হাইকমিশনার জানান, মালয়েশিয়া সরকার রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের জন্য কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের কাছে একটি মাঠে হাসপাতাল স্থাপন করেছে।
আমির ফরিদ বলেন, ‘মালয়েশিয়া দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপাক্ষিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। আসিয়ান সদস্য হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে মালয়েশিয়া।’
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার কবে খুলবে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে। আমরা উভয় দেশের জন্য আরও উপযুক্ত চুক্তি তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করছি।’
মালয়েশিয়ার হাইকমিশনের প্রথম সচিব (অভিবাসন ও কনস্যুলার) মোহামাদ ইয়াহিয়া বিন রহমত, পর্যটন মালয়েশিয়া ঢাকার বিপণন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শোয়েব এবং মালয়েশিয়ার হেলথ কেয়ার ট্র্যাভেল কাউন্সিলের মার্কেট ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর ফারাহ দেলাহ সুহাইমী আলোচনায় বক্তব্য দেন।