নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: মাতাসাগর নামে দিনাজপুরের ৪৫ একর খাস জমি খালেদা জিয়ার পরিবারকে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে করা আপিল দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে নথিপত্র প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে আপিলের শুনানি কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করেননি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ।
আবেদন দায়ের করার পর সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে বন্দোবস্তের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়া মাতাসাগরের প্রায় ৪৫ একর জমি সংক্রান্ত মামলায় আপিল দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে অ্যাসিল্যান্ড মো. আরিফুল ইসলাম এ আবেদন করেন।
তিনি বলেন, এটা সরকারের সম্পত্তি। সাবেক আইন সচিব (আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক দুলাল) দিনাজপুরের যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ রায় দিয়ে তাদের দখলে হস্তান্তর করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৪ সালে এ সম্পত্তি নিয়ে মামলা হয় এবং ২০০৫ সালে রায় হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে রায় ঘোষণাটি ছিল অনভিপ্রেত। এ রায়ের পর হাইকোর্টে আপিল হলে মামলার এক্সিবিট (প্রদর্শিত নথিপত্র) নিয়ে গেছে যার কারণে মামলটা রেডি হচ্ছে না। আজকে দিনাজপুরের ডিসির প্রতিনিধি হিসেবে সেখানকার অ্যাসিল্যান্ড এসে দ্রুত সময়ে আপিলটি শুনানি করার জন্য এফিডেভিট করেছেন।
জানা যায়, দিনাজপুরের মাতাসাগরে প্রায় ৪৫ একর খাসজমি বরাদ্দ হয় খালেদা জিয়ার বাবার মালিকানাধীন দিনাজপুর লাইভস্টক অ্যান্ড পোলট্রি ফার্মের নামে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে বন্দোবস্তের মাধ্যমে বরাদ্দটি নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার বাবার মৃত্যুর পর তার ভাই, বোন এবং একপর্যায়ে তার মা পোলট্রি ফার্মের ব্যবসায়িক শেয়ার বিক্রি করে দেন। সর্বশেষ ওই পোলট্রি ফার্মের শেয়ারের মালিকানা দাঁড়ায় বিএনপি নেতা চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান ও তার ভাই মিজানুর রহমানের।
২০০৪ সালে খাস জমিটি সরকারের নামে রেকর্ড হয়েছে জানতে পেরে নিজেদের নামে স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে দিনাজপুরের আদালতে মামলা দায়ের করেন মিজানুর রহমান ও ফজলুর রহমান। বিএনপি শাসনামলে ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল ওই জমির স্বত্ব তাদের দু’জনের নামে ঘোষণা করে রায় দেন দিনাজপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক সদ্য বিদায়ী আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক দুলাল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি আপিল করে সরকার। কিন্তু মামলায় প্রদর্শিত নথি না থাকায় দীর্ঘ প্রায় দশ বছর আপিলের শুনানি করা সম্ভব হয়নি। আজ রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) আপিলটি দ্রুত শুনানির জন্য দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের পক্ষে একটি আবেদন করা হলো।
আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বিবাদীপক্ষ (ডিসি অফিস) আপিলটি দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ, বাদীপক্ষ রায় ঘোষণার পর পরই প্রদর্শিত ডকুমেন্টস নিম্ন আদালত থেকে উঠিয়ে নেয়। বাদীপক্ষ একাধিক নোটিশ গ্রহণ করলেও তারা ওইসব ডকুমেন্টস দাখিল করেনি। বাদীপক্ষ জেনেশুনেই এ আপিল নিষ্পত্তি করতে বিলম্ব করছে। এ কারণে ওইসব প্রদর্শিত নথি ছাড়াই দ্রুত আপিলটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
মাতাসাগরের ইতিহাস
সপ্তদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলের প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন সুখদেব। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে ১৬৭৭ সালে ‘মহারাজা’ উপাধি দেন। মহারাজা সুখদেব প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করতে দিঘিটি খনন করে তার মাকে উৎসর্গ করেন। এ জন্য এর নাম হয় মাতাসাগর। এক সময় শালবনে ঘেরা ছিল দিঘিটি।