ঢাকা: করোনার ভয়াবহতার মধ্যেই দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী সংসদ অধিবেশন বসছে আজ। এটি হবে এ বছরের দ্বিতীয় ও একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন।
স্বল্পতম সময়ের জন্য বসবে এ অধিবেশন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ডাকা অধিবেশনটি আজ শনিবার বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হবে।
অধিবেশন চলবে বড়জোর এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এবারের অধিবেশনে গণমাধ্যমকর্মী এবং দর্শনার্থীদের উপস্থিতির সুযোগ থাকছে না। সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিও থাকছে সীমিত। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সবাই থাকবেন না এ অধিবেশনে।
করোনাভাইরাসের সতর্কতা নির্দেশনা মেনেই কমসংখ্যক এমপি অংশ নেবেন। সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন জানান, স্বল্প সময়ের জন্য বসা এ অধিবেশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নির্দেশনা মেনে চলা হবে। দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকায় ত্রাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অধিবেশনে উপস্থিতি কম থাকবে।
এদিকে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে অধিবেশনে সশরীরে উপস্থিত না হয়ে সংসদ টেলিভিশন থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে সবার জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সংসদ অধিবেশন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করা হবে। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের সরাসরি সংসদে না এসে নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করে সংসদ টেলিভিশন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত অধিবেশন কাভার করার জন্য বিনীত অনুরোধ করা হল।
সংসদ সচিবালয় বলছে, এই অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকছে না। কোনো বিল উত্থাপন ও পাস হবে না। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়নের পর চলতি সংসদের সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফসহ অন্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবি করা হবে।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। এরপর জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ নিয়ে আলোচনা শেষে অধিবেশন সমাপ্ত হবে। এর আগে দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারি কর্মকমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন উত্থাপন করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার ভয়াল থাবার কারণে একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশন দেশের ইতিহাসে একেবারেই ব্যতিক্রম হবে। এই প্রথম ছুটির দিনে আহ্বান করা এই অধিবেশনে ৬০ থেকে ৭০ জনের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের বৈঠকের কোরাম পূরণ করতে সর্বনিম্ন ৬০ জনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আর সংসদের অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যসহ অন্যদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অধিবেশন চালানোর জন্য হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকবেন।
মন্ত্রী-এমপিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গণপূর্তেরও শুধু অপরিহার্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকবেন। সাউন্ড সিস্টেম, সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি কমাতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই অধিবেশন আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগেও সংসদের সপ্তম অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদের অধিবেশন আবার বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের অধিবেশন আহ্বানের বিধান রয়েছে।