সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা রোমাঞ্চ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২
  • ১১৭ বার পঠিত

বাংলাদেশের মানুষ সংসার করে ক্রিকেটের সঙ্গে। কিন্তু তাদের প্রথম প্রেম হচ্ছে ফুটবল – এমন একটি কথা বহু আগে থেকেই প্রচলিত। ফুটবল বিশ্বকাপ ঘিরে দেশজুড়ে উত্তাপ সেটিরই জানান দেয় যেন। বিশ্বকাপের দিনগুলোতে প্রতিটি বাসাবাড়ির ছাদ ছেয়ে যায় রং-বেরংয়ের পতাকায়। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে ফুটবলপ্রেমীরাও মেতে ওঠেন বিশ্বকাপ উন্মাদনায়। নিজ দেশের অংশগ্রহণ না থাকলেও বিশ্বকাপ ঘিরে এ উন্মাদনার একটা বড় অংশজুড়ে থাকে লাতিন আমেরিকার দুটি দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা।

বলতে গেলে, দেশে বিশ্বকাপ জ্বরের সিংহভাগজুড়েই থাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। জার্মানি, ফ্রান্স বা স্পেনের মতো দলের সমর্থক থাকলেও মূলত লাতিন এ দুই পরাশক্তিকে নিয়েই বেশি হয় আলোচনা। এমন কী বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঢাকার ছোট-বড় পোশাক কারখানা থেকে শুরু করে পাড়ার দর্জির দোকানেও যেসব পতাকা তৈরি হয় তার সিংহভাগই এ দুই দলের দখলে। পাশাপাশি চায়ের আড্ডা কিংবা তর্ক-বিতর্কেও সমর্থকরা ভাগ হয়ে যান এ দুদলে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লাতিন আমেরিকান জায়ান্টদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই, বিশ্বকাপে তাদের জাতীয় দলও অনুপস্থিত, দলটা র‍্যাংকিংয়ে ২১১টি দলের মধ্যে ১৯২তম, কিন্তু ঠিকই বিশ্বকাপজ্বরে কাঁপছে গোটা বাংলাদেশ। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশের শহরগুলো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় সয়লাব।

পেলে ও ম্যারাডোনার হাত ধরে শুরু

বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখেন দুই দলের দুই কিংবদন্তি পেলে ও দিয়েগো ম্যারাডোনা। ষাট-সত্তরের দশকে ফুটবলে রাজ করেন ব্রাজিলের ‘কালো মানিক’ খ্যাত পেলে। তারপর দেশের স্কুলের পাঠ্যবইয়েও স্থান করে নেন এ ফুটবল গ্রেট। তখন থেকেই এ দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে পেলের নাম। এতে ব্রাজিলের প্রতি সমর্থনও বেড়ে যায়।

অন্যদিকে, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মানুষের মনে জায়গা করে নেয় আর্জেন্টিনা। যার নেপথ্যে ছিলেন একজন দিয়েগো ম্যারাডোনা। এ ফুটবল ঈশ্বরের পায়ের জাদুতে বুঁদ হতে থাকে মানুষ। আর ঠিক তখন থেকেই এ দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার শুরু বলে মনে করা হয়। শুধু পেলে-ম্যারাডোনা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, এরপর রোনালদো-বাতিস্তুতা কিংবা রোনালদো-ওর্তেগা আর এখন চলছে মেসি-নেইমারকে নিয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখানো হয় ১৯৮২ সালে। প্রবীণ ফুটবল সমর্থকদের মতে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনার শুরুটা তখন থেকেই। টেলিভিশনে বিশ্বকাপ দেখানোর পর থেকে টানা পাঁচটি বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের দাপট থাকার কারণেই এই সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হয়।

আশির দশক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চা বিক্রি করছেন আব্দুল জলিল স্বপন। যিনি ‘স্বপন মামা’ নামেই অধিক পরিচিত। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে খেলা দেখার জন্য টিএসসিতে টিভি নিয়ে আসা হয়। দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসতো তখন খেলা দেখতে। তখন থেকেই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থক গোষ্ঠী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় বলে মত তার।

আর্জেন্টিনার ফুটবল অনুসরণ করছেন এমন একজন বলেন, ম্যারাডোনার ব্যক্তিত্ব ও খেলার ধরন ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছিল। তাকে ঘিরেই আর্জেন্টিনার সমর্থক তৈরি হয়। এছাড়া দেশে টেলিভিশন আসার পর যে দুটি বিশ্বকাপ দেখতে পেরেছে বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা। তার প্রথমটিতে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, পরেরটিতে ফাইনাল খেলেছে। তাই আর্জেন্টিনার সমর্থক তৈরিতে এ দুটি বিশ্বকাপ এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

অন্যদিকে, ব্রাজিলের সমর্থক তৈরি হয়েছে দুটো প্রজন্মকে ঘিরে। প্রথমটি পেলের যুগ, ষাটের দশকে অনেকেই পেলের খেলার কারণে ব্রাজিল সমর্থন করতো; কিন্তু তখন প্রচার বেশি ছিল না। তবে পরে নব্বইয়ের দশকে ফুটবল অঙ্গনে ব্রাজিলের উত্থান বড় ভূমিকা রাখে সমর্থক গোষ্ঠী তৈরিতে।

পারিবারিক সূত্রে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা

পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা পরবর্তীতে মেসি-নেইমারদের নান্দনিক ফুটবল ছাড়াও পারিবারিক সূত্রেও দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক গড়ে ওঠে। বিষয়টি একটু খোলাসা করছি। একবিংশ শতাব্দীতে যাদের জন্ম, তারা সরাসরি পেলে ও ম্যারাডোনার খেলা উপভোগের সুযোগ পাননি। কিন্তু বাবা-চাচাদের কাছ থেকে শুনে শুনেই অনেকে সমর্থক বনে যান। এমন একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান।

সময় সংবাদকে তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই ব্রাজিলের সমর্থক। বিশ্বকাপ আসলেই খাবার টেবিল থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা সবখানে ব্রাজিল নিয়ে চর্চা হতো। আর সেখান থেকেই দলটি নিয়ে আলাদা আগ্রহ তৈরি হয়। এখন তো ব্রাজিল আমার ধ্যানজ্ঞান। নিয়মিত খেলা দেখি। এমনকি ব্রাজিলের ফুটবলাররা যে ক্লাবের হয়ে খেলে তাদের খেলাও নিয়মিত দেখি। এছাড়া পুরনো খেলাও নেট থেকে দেখা হয়।

তবে ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তার মতে, বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক। যদিও এখনো প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হতে পারিনি। তবে মেসি-ডি মারিয়াসহ সবার খেলা ভালো লাগে। মেসির কারণে একসময় বার্সেলোনার সমর্থক ছিলাম। এখন পিএসজি সমর্থন করছি।

জার্সি বিক্রিতেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দাপট

বিশ্বকাপের মৌসুমে জার্সি ও পতাকাসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অন্য দলের চেয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এসব সামগ্রী বিক্রির হার বেশি। গুলিস্তানের এক দোকানি সময় সংবাদকে সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি চাহিদা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সিসহ অন্যান্য সামগ্রীর। অন্য দলের জার্সি এক চালান আনলে বিক্রি শেষ করা নিয়ে চিন্তা থাকে। কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার জার্সি নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যায়।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাইরের জগত

লাতিন দুই পরাশক্তি ছাড়াও বাংলাদেশে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির মতো দলগুলোর সমর্থকও দিন দিন বাড়ছে। তেমনই একজন গণমাধ্যমকর্মী মহিউদ্দিন সোয়াত। ফ্রান্সের এ সমর্থক মনে করেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সবশেষ কবে শিরোপা জিতেছে সেটা বলতে হলে ইতিহাসে ঢুকে যেতে হবে। এক মেসি কিংবা নেইমার ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য বড় খেলোয়াড়ও নেই তাদের। তবুও অনেকে দল দুটির সমর্থক।

তার মতে, এ যুগে যারা খেলাটা বোঝেন তারা এ দুদল বাদ দিয়েই সমর্থন দেবে। কারণ ফুটবলে নতুন জোয়ার এনেছে নিঃসন্দেহে ইউরোপের দলগুলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com