রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

জলবায়ু পরিবর্তনে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে ৩০ কোটি মানুষ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৯
  • ২৩০ বার পঠিত

সিটিজেন ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সৃষ্ট দূর্যোগে গবেষকরা এতদিন ধরে যা আশঙ্কা করতেন তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এমনটাই জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিভিত্তিক জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রাল গবেষণাটি করেছে। নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত ওই গবেষণা নিবন্ধে বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে বন্যার কবলে পড়বে বিশাল একটি এলাকা। যেখানে ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের বসতি।

গবেষকরা এর আগে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানিয়েছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পরিচালিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, ৮ কোটি নয় আসলে গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন ৩০ কোটি মানুষ।

ক্লাইমেট সেন্ট্রাল নামের জলবায়ু গবেষণা সংস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমুদ্রের পানির ওঠানামা এবং স্থলভূমিতে তার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত এতটা নির্ভূল নয় দাবি করে সংস্থাটি বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রের পানির স্তর উপকূল ছাপিয়ে বিশাল এলাকা প্লাবিত করবে।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও গবেষক দলের নেতৃত্বদানকারী স্কট কালপ বলেন, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দেয়া এর আগের পরিসংখ্যানের সঙ্গে পার্থক্যটা ছিল একটা বড় ধাক্কা। তিনি তাদের করা গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বলে জানান।

বিজ্ঞানী স্কট কালপ বলেন, ‘আমরা এবার যে গবেষণাটি করেছি তাতে দেখা যাচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শহর, অর্থনীতি, উপকূলীয় এলাকা এবং গোটা পৃথিবীর অবস্থান কীভাবে পুনর্গঠিত হবে। হয়তো আমরা বেঁচে থাকতে থাকতেই আমাদেরকে এই বিশাল পরিবর্তন দেখে যেতে হবে।’
পূর্বের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, বিংশ শতাব্দীতে গোটা বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছিল। ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একবিংশ শতাব্দীতে তা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন তারা।

কিন্তু ক্লাইমেট সেন্ট্রালের বিজ্ঞানীদের দাবি, গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে যে ব্যাপক হারে বিশ্ব উষ্ণায়ন বেড়ে চলেছে, তাতে অ্যান্টার্কটিকার বরফ নির্ধারিত সময়ের আগেই গলতে শুরু করবে। তাতে করে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২ মিটারেরও বেশি বাড়তে পারে!

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এশিয়া। তার মধ্যে বাংলাদেশ এবং চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাদের মতে, বাংলাদেশে ৯ কোটি ৩০ লাখ মানুষ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন। চীনে এই সংখ্যাটা চার কোটি ২০ লাখ।

উপকূলবর্তী এসব মানুষকে অবিলম্বে নিরাপদে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা উচিত বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার ডিনা লোনেস্কো। তার কথায়, ‘অনেকদিন ধরে আমরা সতর্ক করে আসছি। সব দেশের সরকারের উচিত হবে এখন থেকে এই স্থানান্তরিতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা।’

গবেষকরা বলছেন, গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের বসতি এশিয়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বন্যার পরিমাণ আটগুণ বেড়ে যাবে। ভারতে সেই ঝুঁকি বাড়বে সাতগুণ আর চীনে সেটা তিনগুণ বেড়ে যাবে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ।

এমন আশঙ্কার কথা চিন্তা করে ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে তাদের রাজধানী জাকার্তা থেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শহরটি আস্তে আস্তে দেবে যাচ্ছে এবং বন্যার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। নতুন পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দোনেশিয়ার ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এই ঝুঁকিতে আছে। আগে যা ছিল ৫০ লাখ।

ক্লাইমেট সেন্ট্রালেন প্রধান বিজ্ঞানী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেঞ্জামিন স্ট্রাউস বলছেন, ‘কার্বন নির্গমন যতই কম হোক না কেন অন্য অনেক দেশেরও ইন্দোনেশিয়ার এমন পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত। সমুদ্র উপকূলবর্তী মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে হবে। আমরা সত্যিই ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে আছি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com