অনলাইন ডেস্ক: সাবরা বাজার। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের অন্যতম খোলা বাজার। মূলত বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে থাকে এটি। এখানে আছে বাহারি পণ্যের ৫০টির মতো দোকান, সবগুলোর মালিকই বাংলাদেশি।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লেবাননের নানা প্রান্ত থেকে সবজি, মাছসহ নানা কাঁচামাল নিয়ে অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসেন তারা। তাই এর খ্যাতি ছড়িয়েছে বাংলা বাজার বা বাংলাদেশিদের বাজার হিসেবে।
শনিবার আধাবেলা এবং রোববার পুরোদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে জমজমাট থাকে সাবরা বাজার। সাপ্তাহিক ছুটির অবসরে দূর-দূরান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছুটে আসেন এখানে, প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য সদাই করতে। এ সময় ৫/৬ হাজার প্রবাসীর পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো বাজার।
শুধু বেচা-কেনাই নয়, সাপ্তাহিক সদাই ঘিরে বাংলাদেশিদের মিলন মেলায় রূপ নেয় সাবরা। মনে হয় প্রবাসে এক খণ্ড বাংলাদেশ। রোববার (২২ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাতসকালে সাবরা বাজারে হঠাৎ দেখা মেলে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের। তার আগমনে উপস্থিত বাংলাদেশিরা বেশ অবাক হন এবং অনেকে ধরে নেন, সম্ভবত তিনি বাজার করতে এসেছেন। কিন্তু পরে ভুল ভাঙে সবার।
রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার মূলত সাবরা বাজারে এসেছেন আকস্মিক পরিদর্শনে। কারণটা রাষ্ট্রদূত নিজেই জানালেন। ‘সাবরা বাজারের সঙ্গে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশির জীবন ও জীবিকা জড়িত। বর্তমানে লেবাননের সংকটময় সময় তাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার জন্য পরিদর্শনে আসা।’
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম সচিব (শ্রম) আব্দুল্লাহ আল মামুন, তৃতীয় সচিব আব্দুল্লাহ আল সাফিসহ দূতাবাসের কর্মকর্তরা।
রাষ্ট্রদূত নিজ দেশের নাগরিকদের খোঁজখবর নেবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমটা হলো, এই প্রথম লেবাননে বাংলাদেশি কোনো রাষ্ট্রদূত সাবরা বাজার পরিদর্শন করেন এবং প্রবাসীদের খোঁজখবর নেন। এ কারণে রাষ্ট্রদূতকে সামনে পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা হয়ে পড়েন আবেগাপ্লুত। আবার কেউ হন বাকরুদ্ধ। কেউ কেউ বলেন, তাদের অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল রাষ্ট্রদূতকে সামনে থেকে দেখার এবং আজ তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ হলো।
রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার পুরো বাজার ঘুরে দেখেন। তিনি প্রবাসীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বাজার করতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলেন। তাদের অভাব-অভিযোগগুলো শোনেন।
ব্যবসায়ীদের কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে জানান, সাবরা বাজারে মাঝেমধ্যে চলা পুলিশি অভিযানের সময় বাংলাদেশি দোকানিদের নানা দুর্ভোগে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ জানান তারা।
রাষ্ট্রদূত লেবাননের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ নিরসনে সব ধরনের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
অন্যদিকে কেনাকাটা করতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ কেউ রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চান, অবৈধভাবে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং পরবর্তী ধাপের বিষয়ে। আবার কারও জিজ্ঞাসা ছিল, ডলার সংকটের নিরসন নিয়ে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছিলেন। যার মধ্যে ৫২৭ জনকে দেশে পাঠানো হয়েছে। লেবাননের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা যদি না থাকত তাহলে আরও আগেই তাদের দেশে পাঠানো সম্ভব হতো। একই কারণে বাকিদের প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হলেও আশা করছি সহসা সুখবর আসবে। আর প্রথম ধাপ শেষ হলেই পরবর্তী ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
ডলার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রবাসীরাই শুধু নয়, লেবানিজরাও এ সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগে আছেন। সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকের সুদ কমানোসহ নানা চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির সরকার। প্রবাসীদের জন্য সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিলেও অভাবনীয় চাপের মুখে তা স্থগিত হয়ে যায়। তবে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তাতে আশা করা যায় ডলার সংকটসহ দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ইতিবাচক চিত্র দেখা যাবে।
লেবাননের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করা এবং দেশটির কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত।
নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে অনেক প্রবাসী সেলফি আর ফটোসেশনে স্মৃতি ধারণ করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকারও আন্তরিকভাবে তাদের অনুরোধে সাড়া দেন।