নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি কাউন্সিলর নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চলছে। ২২নং ওয়ার্ডে বিগত দিনে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তপু গুম হয়েছেন। হাতিরঝিল মন্দির নিয়ে খুন হয়েছেন যুবলীগ নেতা। এই আতঙ্ক আজও তাড়া করছে এলাকাবাসীকে। এ কারণে আগামী দিনের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর বেছে নিতে অনেক হিসাব-নিকাশ কষছেন ওয়ার্ডবাসী। ঢাকা-১১ আসনের রামপুরা ও হাতিরঝিল থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ২২নং ওয়ার্ড। উলন রোড, ওয়াপদা রোড, মহানগর প্রজেক্ট, পূর্ব রামপুরা বনশ্রী নিয়ে গঠিত এই ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কমিশনার লিয়াকত আলী।
সরেজমিনে জানা গেছে, অনেক সমস্যায় জর্জরিত এ ওয়ার্ড। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেননি বর্তমান কমিশনার। এ ওয়ার্ডে কোনো কমিউনিটি সেন্টার নেই, স্থায়ীভাবে কোনো বাজার নেই। রাস্তাঘাট সংস্কার করা হয়নি, মহল্লার রাস্তাগুলো খুবই সরু। এখানে সুয়্যারেজ ব্যবস্থাহীন অপরিকল্পিত রাস্তা রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বৃষ্টি হলেই অভ্যন্তরীণ সড়ক ও গলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই পানি নামতেও অনেক সময় লাগে। এখানে ডিএনসিসির কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া ওয়ার্ডের কোনো কোনো এলাকায় পানির তীব্র সমস্যা রয়েছে। এই ওয়ার্ডের উলন রোড মহানগর প্রজেক্ট ও ওয়াপদা রোডে মাদকের ছড়াছড়ি। এলাকার যুবসমাজ মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এই আধিপত্যের লড়াইয়ে রামপুরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তপু গুম হয়ে যান। তার খোঁজ আজও মেলেনি। ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে সাধারণ পোশাকের তিন ব্যক্তি তপুকে তুলে নেয় বলে তার পরিবার অভিযোগ করে। এ ব্যাপারে ৩০ জানুয়ারি ভাটারা থানায় জিডি ও ১ ফেব্রুয়ারি অপহরণের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, তপুকে তারা আটক করেনি। এদিকে, তপুর খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা ক্রমেই ভেঙে পড়ছেন। দ্বারস্থ হচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। তপুর মা সালেহা বেগম বলেন, কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আমার ছেলেটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। র্যাব, পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি সবার কাছে ধরনা দিচ্ছি। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারছেন না।
পারিবারিক সূত্র বলছে, তপু একাধিকবার রামপুরা থানা ও ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ দক্ষিণের শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে পুরস্কৃতও হন। তিনি রামপুরার আলী হায়দার স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। তবে স্থানীয় যুবলীগের সঙ্গে তপুর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে ২২নং ওয়ার্ডের মৌলিক সমস্যা দূর করে একটি আধুনিক ওয়ার্ড গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এ ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, পানি, মশক সমস্যা সমাধান করার অঙ্গীকার করেছেন তারা। এ ছাড়া প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ ও পরিবেশ দূষণ রোধ করে নাগরিক সমস্যামুক্ত একটি বাসযোগ্য শান্তিপূর্ণ সবুজ ওয়ার্ড গড়তে চান সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
জানা গেছে, এলাকাবাসীর আশীর্বাদ চেয়ে কেউ কেউ অগ্রিম পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ও দেয়াল লিখন করে প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটারদের সঙ্গে ঘরোয়া ও উঠোন বৈঠকও করছেন কেউ কেউ। দলীয় মনোনয়ন পেতে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা।
এলাকাবাসী জানায়, এই ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচন হয় ক্ষমতাসীন দলের ওপর নির্ভর করে। বিএনপি সরকারের আমলে এই ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন আক্কেল আলী। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আক্কেল আলীর আপন ভাই রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত আলী কমিশনার হন।
গত নির্বাচনে লিয়াকত আলী ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন চিশতী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল্লাহ পপ্পি। পরে ঢাকা-১১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপির নির্দেশে সাজ্জাদ হোসেন চিশতী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও আহসান উল্লাহ পপ্পি নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে লড়াই করে পরাজিত হন।
আগামী ৩০ জানুয়ারি সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান কমিশনার রামপুরা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত আলী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এম আর মুকুল, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাজ্জাদ হোসেন চিশতী, যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি মুজিব মহসীন পিয়াস, রামপুরা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ কে এম লিটু, রামপুরা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাইয়ুম ও ২২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির হিমু।
বিএনপির প্রার্থীরা হচ্ছে সাবেক কমিশনার আক্কেল আলী, রামপুরা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মমিন মাতবর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর হিসেবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ক্রীড়া সম্পাদক নিলুফা ইয়াসমিন নিলু। তিনি ২২নং ওয়ার্ড ছাড়াও ২৩ ও ৩৫নং ওয়ার্ডেও লড়বেন।
বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সম্ভাব্য প্রার্থী নিলুফা ইয়াসমিন নিলু বলেন, আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। জনগণের ভোটে আমি নির্বাচিত হব। এলাকার উন্নয়নে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করব।
সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এম আর মুকুল বলেন, দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। নির্বাচিত হলে এলাকার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করব।
‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ‘আসুন বদলে দিই রামপুরাকে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সাজ্জাদ হোসেন চিশতী। আওয়ামী পরিবারের সন্তান সাজ্জাদ হোসেন চিশতী। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রিন্সিপাল মরহুম আবু তাহের ভূঁইয়া। তিনি ছিলেন ফেনী কলেজের ভিপি, ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, ফেনী জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ফেনী জেলার আহ্বায়ক, ফেনী জেলা জাসদ (ইনু) আহ্বায়ক, নতুন প্রজন্ম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, ঢাকার ফেনী গুণীজন ও মুক্তিযোদ্ধা মূল্যায়ন পরিষদের সভাপতি, সাংবাদিক, কলামিস্ট, সমাজসেবক ও শিক্ষাবিদ। পিতার অনুপ্রেরণায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শতাব্দীর মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনীতি জীবন শুরু করেন। সাজ্জাদ হোসেন চিশতী রাজনৈতিকভাবে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাবেক ৩২নং ওয়ার্ড, মতিঝিল থানা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সাবেক সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, সহসভাপতি ফুটবল সাপোর্টাস ফোরাম, উপদেষ্টা, শহীদ নূর হোসেন সংসদ, আহ্বায়ক, বাংলাদেশ মানবাধিকার উন্নয়ন কমিশন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ)।
সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজের সদস্য (আওয়ামী লীগপন্থী), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নিউজ পেপার কমার্শিয়াল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সাবেক উপদেষ্টা, ইয়ুথ জার্নালিস্ট ফোরাম বাংলাদেশ। উপদেষ্টা, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতি পাঠাগার ও শিশু-কিশোর কল্যাণকণ্ঠ ও যাযাদি ফ্রেন্ডস ফোরামের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পেশাগত জীবনে সাজ্জাদ হোসেন চিশতী বর্তমানে দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়াও দ্য ডেইলি অবজারভার, দ্য ডেইলি পিপলস টাইম, দৈনিক মানবকণ্ঠ, দৈনিক বর্তমান, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক যায়যায়দিন, দৈনিক আজকালের খবরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানতে চাইলে সাজ্জাদ হোসেন চিশতী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার রূপদানকারী, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মাদার অব হিউম্যানিটি, বিশ্বনেত্রী, বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, দেশরত্ন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শে সুখী, সমৃদ্ধশালী, দারিদ্র্যমুক্ত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে কাজ করে যাওয়াই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, সব ধরনের সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধে আগামী দিনগুলোতে কাজ করে যেতে চাই, ওয়ার্ডবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তি, পরিবার তথা সমাজ ধ্বংসকারী সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে চাই। সব নাগরিক সমস্যা ও ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে রামপুরাকে গড়ে তুলতে চাই একবিংশ শতাব্দীর সেরা বসবাসযোগ্য ওয়ার্ড হিসেবে।