নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল আধুনিক ঢাকা গড়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) লেকশর হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
সুস্থ ঢাকা: সুস্থ ঢাকার কথা উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই নগরী কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল। এই শহরে বসবাস করা নাগরিকদের সুস্থতা নির্ভর করে শহরের সুস্থতার ওপর। একটি সুস্থ ঢাকা নিশ্চিত করতে হলে অতিদ্রুত কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জরুরি। যা বাস্তবায়িত হলে ঢাকাবাসী আরও গর্বের সঙ্গে বলতে পারবে ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম সুস্থ শহর। একটি সুস্থ ঢাকা শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি আমার প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে।
সুস্থ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে: ‘উন্নত বিশ্বের মতো আইভিএম পদ্ধতিতে সকল সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম উন্নয়ন। সকলের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে আরআরএফ স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারণ ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাইকেন্দ্র স্থাপন, তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বাড়াতে শহরের সকল ওয়ার্ডে নিয়মিত পাড়া উৎসব উদযাপন। ডিএনসিসির প্রতিটি স্থাপনায় মার্তৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ, বস্তিবাসীদের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ।’
‘বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ। প্রতিটি এলাকায় জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নাগরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া; ঢাকা উত্তরের উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় মিস্ট ব্লোয়ার এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো; ডিএনসিসির বর্ধিত এলাকায় সিআরএইচসিসি এবং পিএইচসিসি নির্মাণ; ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে নানা সুবিধা সম্বলিত ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি করা এবং মিরপুরে ডিএনসিসির নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ অনুরাগীদের জন্য বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ করা।
সচল ঢাকা: আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দারা তাদের পাড়া, মহল্লাসহ সকল রাস্তাঘাটে চলতে গেলেই নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন অনেকেই। প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিত ফুটপাত, ফুট ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, সাইকেল ও মোটরসাইকেল লেন, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকায় নগরবাসীর অবাধ চলাচল ব্যাহত হয়-এসব সচল ঢাকার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সচল ঢাকার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে: ফুটপাত দখলমুখ করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করা; হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা; যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন; প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত ঢাকা বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কাজ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সকলকে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা; নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ; নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকা উত্তরে বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যাল স্থাপন; আধুনিক নগর পরিহন ব্যবস্থার জন্য ই-টিকিটিং সেবা প্রদান, অ্যাপনির্ভর সময়সূচি প্রবর্তন এবং সুনিয়ন্ত্রিত ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করা; সাইকেলের জন্য আলাদা লেন (যেখানে সম্ভব) এবং সাইকেল পার্কিং তৈরি করা; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন; নাগরিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট বাসস্টপ ও বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য গণস্থাপনা এবং গণপরিবহন নিশ্চিতকরণ; প্রতিটি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন; নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান ট্র্যাক করে সমাধান করা এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা।
আধুনিক ঢাকা: আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের রাজধানীগুলোর মতো ঢাকার আধুনিকায়ন না হলে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারে পারব না। কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বর্তমান সময়ে শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্য। ঢাকার আধুনিকায়ন হলে, নগরীর সকল ও পেশার আধুনিকায়ন হলে নগরীর সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীববযাত্রা বদলে যাবে। স্বপ্নের আধুনিক ঢাকা নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
আধুনিক ঢাকা গড়তে আতিকুল ইসলামের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে: সবার ঢাকা অ্যাপ’র মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ ও সার্বক্ষণিক তদারকিসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ, যেখানে মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে; বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস চালুকরণ; ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্মমৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা প্রদান; ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তৈরি হবে হেলপ ডেস্ক; ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন না করে ডিএনসিসির মালিকানাধীন কাঁচা বাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য চলবে স্ট্রাকচারাল আপগ্রেডেশন; উত্তর ঢাকা একটি ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকভাবে কয়েক এলাকায় ‘স্মার্ট নেইবার হুট’ হিসেবে গড়ে তুলে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি পাড়া মহল্লাকে এই উদ্যোগের আওতায় আনা; একটি সার্বক্ষণিক ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরি; তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবা কেন্দ্র গঠন; নগরের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থাপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণের সহাতায় সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পিনা গ্রহণ; প্রতিটি এলাকায় সেন্টারগুলোর আধুনিক ও বহুমুখী ব্যবহার; সকল লেক-খালের সংস্কার উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন; মশা নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক স্পেস বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।