নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তকে ‘চরম আত্মঘাতী ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ’ আখ্যায়িত করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, পূর্ণমাত্রায় সার্বভৌম ও মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র। এখানে জাতিসংঘের ব্যানারে পশ্চিমা শক্তির কোনো এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ—শুধু আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা নয়, বরং ইসলাম ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত হানা। তারা যদি বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে, তবে দেশের মুসলিম সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক পরিচয়, পর্দার বিধান, সম্পদ বণ্টনের ন্যায়ভিত্তিক কাঠামো এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে হস্তক্ষেপের পথ খুলে যেতে পারে।
বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা শক্তির দেশের অখণ্ডতা-বিরোধী অপতৎপরতা নতুন কিছু নয়; অতীতেও তারা সেখানে নানা ছদ্মবেশী হস্তক্ষেপ করেছে। কাজেই এ ধরনের উদ্যোগকে ঈমানদার জনতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না—প্রয়োজনে আত্মত্যাগের মাধ্যমেও তা প্রতিহত করা হবে ইনশাআল্লাহ।”
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাদ জুমা, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
বক্তব্যে মাওলানা কাসেমী জাতিসংঘের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, “গত কয়েক দশকে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তানসহ অসংখ্য মুসলিম দেশ মার্কিন ও রুশ সাম্রাজ্যবাদের বোমাবর্ষণ, দখলদারিত্ব, লুটপাট ও গণহত্যার শিকার হয়েছে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দমন-পীড়ন বছরের পর বছর ধরে চলমান, কাশ্মীরেও একই চিত্র। অথচ জাতিসংঘ এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “যে সংস্থা নিজের অস্তিত্বের যুক্তি প্রমাণে এতটা দুর্বল, তারা আমাদের দেশে এসে মানবাধিকার রক্ষার কথা বলবে—এটা জাতীয় স্বার্থ, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।”
তিনি আরো বলেন, “জাতিসংঘের নামে কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা হলে তা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও সচেতন মানুষ জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করবে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই—এমন দেশবিরোধী, ইসলামবিরোধী, জনগণের অনুভূতিবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তার জন্য জনগণের তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে।”
বিক্ষোভে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহাম্মদ নূর হোসাইন বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লব ছিল মানুষের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন—তাদের রক্ত এখনো শুকায়নি। এই আত্মত্যাগের সঙ্গে বেঈমানি করে কোনো বিদেশি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘ অফিস খোলার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ২০২৪ সালের শহীদদের হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
বিক্ষোভে বক্তারা সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান এবং বলেন, “দেশের মুসলমানরা আর কোনো গোপন চুক্তি, বিদেশি চাপ বা ইসলামবিরোধী পদক্ষেপকে বরদাশত করবে না।”
ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহবায়ক বায়েজিদ আল হোসাইনের সভাপতিত্বে ও হাসান আহমদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, জমিয়ত নেতা মাওলানা আব্দুল্লাহ গাজীপুরী, মাওলানা ইদ্রিস কাসেমী, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, ছাত্রনেতা রাহেবুল ইসলাম, ইয়াসীন আরাফাত, সাদ জুন্নুর, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।