 
							
							 
                    সম্প্রতি বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডকে দেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অগ্নিকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পরেছে।
বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে সংগঠিত অগ্নিকাণ্ড কেবল একটি অবকাঠামো গত দুর্ঘটনা নয়।
এটি জাতীয় বানিজ্য,অর্থনীতি,প্রশাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি গভীর সতর্কবার্তা।
দেশের সকল স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের আমদানি ও রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণাগারে অগ্নি নিরাপত্তা জোরদার ও প্রয়োজনীয় বীমা কাভারেজ নিশ্চিতকরণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব।
বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বাংলাদেশের সকল স্থলবন্দর (যেমন সোনামসজিদ, হিলি, বুড়িমারী, আখাউড়া, বালোনগর ইত্যাদি) এবং সমুদ্রবন্দরসমূহ (চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা) দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রতিদিন এই বন্দরগুলোতে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হচ্ছে, যার অধিকাংশই গুদাম, কার্গো শেড ও সংরক্ষণাগারে সংরক্ষিত থাকে। এই পণ্যসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় পক্ষের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ধারাবাহিক ঘটনা বন্দর এলাকা ও পণ্য সংরক্ষণাগারের ঝুঁকিকে নতুন করে উন্মোচিত করেছে। এই ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বীমা কাভারেজ এখন সময়ের দাবি।
০১. অগ্নি নিরাপত্তা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
ক) অবকাঠামোগত ব্যবস্থা
• সকল বন্দর এলাকার গুদাম, কার্গো শেড ও প্রশাসনিক ভবনে ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ও ধোঁয়া শনাক্তকরণ অ্যালার্ম সিস্টেম স্থাপন।
• জরুরি বহির্গমন পথ (Emergency Exit) ও ফায়ার এলার্ম সিস্টেম সর্বদা সচল রাখা।
• বন্দরভিত্তিক অগ্নি-নিরাপত্তা কমিটি গঠন ও নিয়মিত ফায়ার ড্রিল পরিচালনা।
খ) সমন্বয় ও প্রশিক্ষণ
• বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাথে সমন্বিত জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (Emergency Response Plan) প্রণয়ন।
• বন্দরের শ্রমিক, কর্মকর্তা ও এজেন্টদের নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদান।
০২. পণ্য সংরক্ষণাগারে প্রয়োজনীয় বীমা কাভারেজ (Insurance Coverage)
দেশের প্রচলিত আইন (বাংলাদেশ বীমা আইন, ২০১০) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মানদণ্ড (ICC & Incoterms) অনুযায়ী নিম্নলিখিত বীমা কাভারেজ বাধ্যতামূলকভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজনঃ
১) Fire & Allied Perils Insurance – অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ, বজ্রপাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে ক্ষয়ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা।
২) Warehouse Liability Insurance – গুদামভিত্তিক পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি, মানবিক ত্রুটি বা অপব্যবস্থাপনা থেকে সুরক্ষা।
৩) Cargo Insurance (Marine / Inland Transit Policy) – পণ্য পরিবহনকালীন দুর্ঘটনা বা ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা।
৪) Business Interruption Insurance – অগ্নিকাণ্ড বা দুর্ঘটনাজনিত কার্যক্রম স্থগিত হলে আর্থিক ক্ষতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা।
৫) Public Liability Insurance – বন্দর এলাকায় তৃতীয় পক্ষের শারীরিক বা সম্পত্তিগত ক্ষতির দায় থেকে সুরক্ষা।
০৩. যৌথ উদ্যোগ ও সচেতনতা কর্মসূচি
দেশের বন্দরভিত্তিক সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষ যেমন –
• সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসমূহ,
• আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক সংগঠন,
• চেম্বার অব কমার্স,
তাদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে,
একযোগে সোচ্চার হয়ে বন্দর এলাকায় অগ্নি নিরাপত্তা ও বীমা কাভারেজ নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।
এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বেনাপোলসহ দেশের সকল স্থল ও সমুদ্রবন্দরকে “Fire Safe & Fully Insured Trade Zone” হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে — যা জাতীয় রাজস্ব, বাণিজ্যিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক আস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোঃ মিজানুর রহমান
সভাপতি-
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস কিলিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন ।
সভাপতি-
ঢাকা কাস্টমস্ এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশন।