বিশেষ প্রতিবেদক: বকেয়া বেতন এবং চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের বহালে বেসরকারি টেলিভিশন এসএটিভির মালিককে ছয়দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
শনিবার দুপুরে গুলশানে এসএটিভির সামনে বকেয়া বেতন এবং বেআইনিভাবে সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ডিইউজে’র আহ্বানে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত সাংবাদিকরা জানান, চার মাস ধরে বেতন দেয়া বন্ধ রয়েছে। সবশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর এসএটিভির মালিক সালাহউদ্দিন আহমেদ আগামী ছয় মাসেও বেতন না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সাত সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দেন।
তারা জানান, কেউ মালিকের কাছে বেতন চাইতে গেলেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়া এসএটিভির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে গত সাত বছরে কারও একটি পয়সাও বেতন বাড়ানো হয়নি। কথায় কথায় চাকরিচ্যুত, বেতন না দেয়া এবং ইনক্রিমেন্টের দাবিতে শেষ পর্যন্ত আমাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য এসএটিভির সব সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধে কর্তৃপক্ষকে ছয়দিনের সময় বেঁধে দেন। এই দাবি মানা না হলে ১২ অক্টোবর এসএটিভির সামনে ২৪ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন।
কর্মসূচি শেষে সাংবাদিক নেতাদের আলোচনার আহ্বান জানায় এসএটিভি কর্তৃপক্ষ। এ সময় এসএটিভির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেন।
এর আগে অবস্থান কর্মসূচিতে ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী টেলিভিশন মালিকদের সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বন্ধ এবং বেআইনি চাকরিচ্যুতির বিষয়ে সরকারের নজরদারির আহ্বান জানান। তিনি তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এসএটিভির মালিকের সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকিসহ তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। তিনি বঞ্চিত এসএটিভির সাংবাদিক, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
ডিইউজের সহ-সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পত্রিকা এবং টেলিভিশন আলাদা মাধ্যম হলেও সবাই সংবাদকর্মী। গণমাধ্যমকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অবস্থান কর্মসূচিতে ডিইউজে’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, কিছু কিছু টেলিভিশন মালিক সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তিনি প্রতিটি টিভি চ্যানেলের মালিকদের সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা আইন অনুযায়ী নিয়মিত পরিশোধের দাবি জানান। অন্যথায় দাবি আদায়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ এসএটিভি’র মালিকের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সব সংগঠন তাদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেন। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকা ও কিছু টেলিভিশন মালিক সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মাইনুল আহসান সোহেলসহ বাংলাদেশ অনলাইন এডিটর্স কাউন্সিলের নেতা এবং এসএটিভির সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।