ক্রীড়া ডেস্ক: সাকিব আল হাসানের খ্যাতি তো শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজোড়া। তবে বাংলাদেশ দলের এত বড় তারকাকে ক্রিকেট মোড়লদের অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপনের দায়ে সাকিবের ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা (এক বছর স্থগিত) আসায় তাই খুশিতে হাততালি দিচ্ছেন বেশিরভাগই।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড় যেমন মনে করছেন, সাকিবের লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়েছে আইসিসি। শাস্তি পুনর্বিবেচনার জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধও করেছেন তিনি।
এমনই শুভাকাঙ্খী পাকিস্তানের সাকলাইন মুশতাকও। একটা সময় বাংলাদেশের স্পিন কোচ ছিলেন তিনি। সাকিবদের কোচিং করিয়েছেন। শিষ্যর এমন নিষেধাজ্ঞার খবর শুনে মনটাকে যেন বাঁধ দিতে পারছেন না পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই অফস্পিনার।
‘সাকলাইন মুশতাক শো’ নামের প্রায় ৮ মিনিটের এক অনুষ্ঠানের পুরোটা জুড়ে সাকিবের পক্ষেই কথা বলে গেছেন সাকলাইন। সেই অনুষ্ঠানে বলা তার কথাগুলো তুলে ধরা হলো সিটিজেন নিউজের পাঠকদের জন্য-
‘সাকিব আল হাসান বিশ্বের অনেক বড় নাম। বাংলাদেশের অনেক বড় খেলোয়াড়। বাংলাদেশের যত সাফল্য; ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি বা টেস্ট, যত ম্যাচই বাংলাদেশ জিতেছে, তার মধ্যে আসল অবদান সাকিবের। সে এমন একজন খেলোয়াড় যে ম্যাচ জেতাতে পারে, ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। পুরো বিশ্বে তার নাম, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার তাকে সবাই মানে। ব্যাটিং বা বোলিং যে কোনো কিছু দিয়েই সে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ম্যাচ উইনার দুই দিক থেকেই। বড় ব্রেইনের অধিকারী।
তিনটি প্রশ্ন আমার মনে আসছে। আইসিসি প্রথমে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরে এক বছর কমিয়ে দিলো। তিনটি প্রশ্ন আমার। কিছুদিন আগে বিসিবির সঙ্গে একটা ঝামেলা চলছিল। সেখানে খেলোয়াড়রা ধর্মঘট করে, সেটা একটা পর্ব। যেখানে সাকিব ছিল এই আন্দোলনের সামনের দিকে। গণমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেটাই জানতে পেরেছি আমরা। এটা একটা ইস্যু।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ২০১৭ আর ২০১৮ সালের মধ্যে তিনবার জুয়াড়ি তাকে প্রস্তাব করেছে। সেটার ফল আসতে দুই বছর লাগলো! আইসিসির এন্টি করাপশন ইউনিট এত বড় সংস্থা, তাদের কোনো খবরই ছিল না? আইসিসি কি করেছে? আইসিসি লোকদের বিভিন্ন কাজে পাঠায়, সবকিছু নজরদারি করে। তখন তারা কি করেছে? এটা আমার প্রশ্ন।
এবার সাকিব আল হাসানের কথা বলি। দেড় অথবা পৌনে দুই বছর আগে জুয়াড়ি তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। সে কিন্তু ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিল না। সে হয়তো জানায়নি। কাকে জানায়নি, বিসিবি নাকি আইসিসিকে? সাকিব কি বিসিবিকে জানিয়েছিল? যদি সাকিব বিসিবিকে জানিয়েই থাকে, তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা কেন সেটা আইসিসিকে জানায়নি? আর যদি সে না জানায়, তবে সেটা তার ভুল।
তারপরও আমি আইসিসি আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বলতে চাই, সে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। সে সেটা গ্রহণ করেনি। এটা তো দেখতে হবে? যদি প্রস্তাবটা গ্রহণ করতো, তবে আলাদা ব্যাপার ছিল। কিন্তু সে তো এটা করেনি। জুয়াড়ি প্রস্তাব করেছে, সে রাজি হয়নি।
কোন সে জুয়াড়ি? তারা একটা মাফিয়া চক্র, পুরো গ্যাং থাকে। আইসিসি বা বিসিবির এখানে কিছুই করার নেই। কেননা তাদের হাত এত বড়, সেখানে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই তাদের।
সবকিছুর পর আমি এটাই বলতে চাই, যদি সাকিব বিসিবিকে জানিয়ে থাকে। তবে দোষ বিসিবির, সাকিবের নয়। আর যা কিছুই হোক, যদি আইসিসির এমন নিয়ম থাকে যে, না জানালে নিষিদ্ধ করব। তবু বলব, এমন ঘটনা যেহেতু এবারই প্রথমবারের মতো হয়েছে (সাকিবের বেলায়)। তাই তাকে ছেড়ে দেয়া উচিত। কেননা এতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে সাকিবেরও।
আমি এতটুকুই বুঝি, ক্ষমার দরজা খোলা রাখা উচিত। কারণ ভুলটা বড় নয়, সে ফিক্সিং করেনি। আর যদি সে বিসিবিকে জানিয়ে থাকে, বিসিবি সেটা চেপে যায়। আর পেছনে যদি অন্য কোনো ঘটনা থাকে। খেলোয়াড়রা ধর্মঘটে গিয়েছে, সেজন্য সুযোগ বুঝে আগের কিছু ধরা হয়েছে। যদি এমন কিছু থাকে? আল্লাহ জানেন, বলতে পারব না।
তবে আমার মনে তিনটি প্রশ্ন এসেছে। সেটাই আমি আপনাদের সামনে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তুলে ধরলাম।’