আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধীকরণ (এনপিআর) নিয়ে মঙ্গলবার বিশেষ বৈঠক শেষে মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এনপিআর হালনাগাদ করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধীকরণ সংক্রান্ত এই খসড়া তালিকা করতে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ার গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে এনপিআর করার জন্য আজ মঙ্গলবার বিপুল ওই অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে সম্মতি দিয়ে মন্ত্রিসভা। জনগণনা কমিশন বলছ, দেশের প্রতিটি সাধারণ বাসিন্দাদের একটি বিস্তৃত পরিচয় অর্থাৎ তথ্য বিবরণী তৈরি করা এর উদ্দেশ্য। তথ্য সংকলনে জনসংখ্যার পাশাপাশি বায়োমেট্রিকের বিশদ বিবরণও থাকবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়ে গোটা ভারতে বিক্ষোভের মধ্যেই ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) করার ঘোষণা দিল মোদি সরকার। আসাম বাদে ভারতের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনপিআর এর কাজ চলবে বলে জানিয়েছে জাতীয় জনগণনা কমিশন।
আসামে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ইতোমধ্যেই সেখানে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে এনপিআর তালিকা থেকে রাজ্যটিকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১ সালের জনগণনার পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যে এনপিআরের তথ্য হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১০ সালে কংগ্রেস সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এনপিআরের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিপের মাধ্যমে এনপিআর তথ্য প্রথম হালনাগাদ করা হয় ২০১৫ সালে। সরকারের এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেছেন, হালনাগাদ হওয়া সেসব তথ্যের ডিজিটালাইজেশনও সম্পন্ন করা হয়েছে।
ভারতের এনপিআর এর নিয়ম অনুযায়ী, একজন সাধারণ বাসিন্দা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয় যিনি কমপক্ষে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে কোনো একটি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছেন কিংবা এমন কোনও ব্যক্তি যিনি পরের ছয় মাস বা তারও বেশি সময় কোনও অঞ্চলে বাস করতে চান।
ভারতের প্রতিটি সাধারণ বাসিন্দার জন্য এনপিআর নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পর ওই আইন নিয়ে বিতর্কের জেরে রাজ্যে এনপিআরের কাজ বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একইভাবে এনপিআরের হালনাগাদ সংক্রান্ত কাজ বন্ধের ঘোষণা দেয় কেরালার রাজ্য সরকারও।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধীকরণের প্রস্তুতি হিসেবেই এনপিআরের কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছে। রাজ্য সরকার এই সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ছাড়পত্র ছাড়া এনপিআর সম্পর্কিত কোনো কাজ আর করা যাবে না।’
এদিকে গত সপ্তাহে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) জেরে যেভাবে বিতর্ক ছড়িয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রস্তুতির সুবিধার্থে আয়োজিত এনপিআর হালনাগাদ করার কাজে সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালার মতো একই পথে হেঁটে এনপিআর কাজ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঞ্জাব সরকারও। যদিও কেন্দ্র সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে এনপিআরের কাজ বন্ধ করার কোনো এখতিয়ার রাজ্য সরকারের নেই। এনপিআরের হালনাগাদ করার কাজটি যে বাধ্যতামূলক, মঙ্গলবার তা ফের জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
বাংলাদেশের মতো ভারতেও ১০ বছর অন্তর জনসংখ্যা গণনা করা হয়। তার আগে সরকারের প্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে তার জন্য কোনো পরিচয়পত্র বা নথির প্রয়োজন হয় না। শুধু মৌখিক তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয় এনপিআর।