অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, সিটিজেন নিউজ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআইয়ের ‘কথিত’ লোকসান খতিয়ে দেখার লক্ষ্যে গঠিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিশেষ কমিটির বৈঠক আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে কমিটি পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নেবেন রবিবারের বৈঠকে।
চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের লোকসানসহ কোম্পানির গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালকদের মনে। তারা মনে করছেন, এসিআইয়ের সাম্প্রতিক বছরগুলোর আর্থিক বিবরণী মনগড়া ও কারসাজিপূর্ণ। কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিক লিমিটেডের (স্বপ্ন) ‘কথিত’ লোকসানের আড়ালে মূল কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। আর তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তারা। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে। ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন-ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন,স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি এফসিএমএ।
কমিটিকে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, এসিআইয়ের সাম্প্রতিক গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক। ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বিষয়টা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য তো নয়ই। আমাদের সন্দেহ, এসিআইয়ের মালিকরা স্বপ্ন-এর লোকসান দেখিয়ে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এসিআই গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা মেনে নেওয়ার মতো বিষয় নয়। স্বপ্ন যদি সত্যিই এত লোকসান দিয়ে থাকে, তাহলে এসিআই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেটি বন্ধ করে দেওয়া।
তিনি আরও বলেন, এটি ব্যক্তি মালিকানার কোম্পানি নয় যে, মালিকরা যা খুশি তা করবেন। এটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডাররাও এই কোম্পানির একাংশের মালিক। তাদের অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার অধিকার কারো নেই।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেওয়ার পরও স্বপ্ন-এর কার্যক্রম বন্ধ করে না দেওয়ায় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ, কোম্পানির মালিকপক্ষের প্রতি অবিশ্বাস বিরাজ করছে। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে সমাপ্ত চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৮) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা। এসিআইয়ের মতো ব্লুচিপ কোম্পানির এই লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজার অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবেদন জানানো হয়। তার প্রেক্ষিতেই এসিআই এর আর্থিক বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই।