অর্থনৈতিক ডেস্ক: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সরকারের ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে; তবে একই সঙ্গে তারা এটাও বলেছে- কেবল কমিশন গঠন করলেই হবে না, স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাও থাকতে হবে কমিশনের। সিপিডির এ চাওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক।
কেননা, স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা না থাকলে যে লক্ষ্য নিয়ে কমিশন গঠিত হচ্ছে, তা ভেস্তে যাবে। উল্লেখ্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরপর সাবেক এ অর্থমন্ত্রী বারকয়েক উদ্যোগ নিলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। সম্প্রতি বর্তমান অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জনসমক্ষে এনেছেন।
বস্তুত অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই সিপিডির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে উপরোক্ত মন্তব্য করে বিভিন্ন সুপারিশ পেশ করা হয়েছে, যা আমলে নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
সময়ের প্রয়োজনে বিস্তৃত হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। ক্রমপ্রসারমান ব্যাংকিং খাতকে অবশ্যই মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।
ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান সংকট নিরসনে একটি কমিশন গঠনের পর প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি এ খাতে আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। আশঙ্কার বিষয় হল, ব্যাংকগুলোয় যোগ্য ও সৎ লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না।
ফলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা পরে খেলাপি ঋণে পরিণত হচ্ছে। এভাবে ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত। বস্তুত ব্যাংকগুলোয় বিরাজমান অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে, যা রোধ করা জরুরি।
এ পারিপার্শ্বিকতায় সরকারের ব্যাংকিং কমিশন গঠনে উদ্যোগ ইতিবাচক ও সময়োচিত। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি ব্যাংকিং কমিশনের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করেছে, সেখানে বড় ব্যবসায়ী ছাড়াও নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ করা হয়েছে কমিশনকে।
পাশাপাশি স্বচ্ছতার জন্য কমিশন কী করছে, তা সময়ে সময়ে জনগণকে জানানোর তাগিদ দিয়ে সিপিডি আরও বলেছে- কমিশনের সদস্য নির্বাচনও হতে হবে দক্ষতা, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা ও সততার মাপকাঠিতে, যাতে তারা প্রভাবমুক্ত ও নির্মোহভাবে কাজ করতে পারেন।
সিপিডির সুপারিশ আমলে নিয়ে নবগঠিত ব্যাংকিং কমিশন দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে আনার পাশাপাশি এ খাতে আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলে দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বাতাস বইবে, তা বলাই বাহুল্য।