৪০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলে উপহার হিসেবে বিক্রেতাকে একটি গাড়ি দেওয়া হবে। আর ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলে বিক্রেতাকে ‘ডায়মন্ড’ পদবী দেওয়া হবে। এই পদবি পেলে একজন গ্রাহক ঘরে বসে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার ও প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে এমন সব অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় নিওলাইফ গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড নামক মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি।
এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতারণার দায়ে নিওলাইফ গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন, পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছে সিআইডি।
সিআইডি বলছে, ভুক্তভোগীর নাম লাকি আক্তার। তিনি নিওলাইফের একজন গ্রাহক ছিলেন। গত বছরের অক্টোবরে লাকি আক্তারের কাছ থেকে কৌশলে টাকা নিয়ে তাঁকে টয়োটা এক্সিও (মডেল ২০১৪) দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ সময় তারা লাকিকে দিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করায়। তারা জানায়, ৩০০ জনকে এমন গাড়ি দেওয়া হবে। এরপর একদিন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন গোপালগঞ্জ যাওয়ার কথা বলে গাড়ি চেয়ে নেন। একই গাড়ি আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করেন। চার মাসের মধ্যে ওই গাড়িই অনেকজনের কাছে গছায় তারা। লাকি আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের বিশেষ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, নিওলাইফ গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড মাগুরার একটি প্রতিষ্ঠান।
তারা ৩০ টাকা দামের মাশরুমের পণ্য তৈরি করে প্রতি ফাইল ১ হাজার ৫৬০ টাকা করে বিক্রি করত। একপর্যায়ে গ্রাহকদের একটা সেমিনার আয়োজন করে বলে, ৪০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলে উপহার হিসেবে বিক্রেতাকে একটি গাড়ি দেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলে বিক্রেতাকে ‘ডায়মন্ড’ পদবি দেওয়া হবে। এই পদবি পেলে একজন গ্রাহক ঘরে বসে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এর কিছুদিন পর তারা আবার জানায়, ডায়মন্ড পদবি পেতে পণ্য বিক্রি করা ছাড়াও তিন থেকে আট লাখ টাকা জমা দিতে পারেন গ্রাহকেরা। কোম্পানির কথায় বিশ্বাস করে কয়েক শ ব্যক্তি ডায়মন্ড পদবি পেতে তিন থেকে আট লাখ টাকা জমা দেন। যাঁরা টাকা জমা দিয়েছিলেন, প্রথম দিকে ওয়েবসাইটে তাঁদের নাম উঠত। তবে একটা সময় ওয়েবসাইট থেকে প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য মুছে ফেলা হয়। তখনই গ্রাহকেরা ধারণা করেন, তাঁরা হয়তো প্রতারণার শিকার হয়েছেন।