মোসারাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে যে অপমৃত্যুর মামলা সেটি তদন্ত করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এই মামলার বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত। নুসরাত এই মামলার বাদী হলেও এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষ করে এই মামলা করার পেছনেরে মোটিভ এখন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নুসরাত ন্যায়বিচার প্রত্যাশী হয়ে মামলাটি করেনি বরং তিনি মামলা করতে গিয়ে তার অন্যরকম পক্ষপাত ছিল। আইনকে বাধাগ্রস্ত করা এবং আইনকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার সুস্পষ্ট কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে করা মামলার ক্ষেত্রে নুসরাত ৫টি ভুল করেছেন এবং এই ভুলগুলোর সবই হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলার জন্য এবং একটি কথার সঙ্গে আরেকটি কথার অসামঞ্জস্যতার জন্য। যে পাঁচটি ভুল তা হলোÑ মুনিয়ার লাশ নামানো নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য : মুনিয়ার লাশ নামানো নিয়ে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত একাধিক
রকম তথ্য দিয়েছেন। তিনি পুলিশের কাছে প্রথমে বলেছেন ফ্যানের সঙ্গে লাশটি ঝুলানো ছিল। তিনি এবং অন্যরা এসে এটি নামিয়েছেন। অন্য একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, লাশ শোয়ানো ছিল। এক জায়গায় তিনি বলেছেন, অন্য একজন লাশ নামিয়েছে তারপর তিনি দেখেছে। এরকম মোট চার রকমের বক্তব্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এই অপমৃত্যুর মামলার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, মুনিয়া যে আত্মহত্যা করেছেন এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই লাশ নিয়ে চার রকমের বক্তব্যের মাধ্যমে বাদী নুসরাতের এর পেছনের মোটিভ ধরা পড়েছে। বিষয়টিতে জল ঘোলা করা এবং কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার মোটিভ ছিল। লাশের তথ্য বারবার অদলবদল করার মধ্য দিয়ে।
বাড়িভাড়া নিয়ে বিভ্রান্তি : এই বাড়িটি নুসরাতের নামে ভাড়া করা এবং এই বাড়িওয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং অ্যাডভান্সের ২ লাখ টাকা নুসরাতই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তার স্বামী স্ত্রী এবং ছোট বোনকে নিয়ে এখানে থাকবেন। এই বাড়িটি যে তার নামে ভাড়া ছিল এ নিয়ে নুসরাত অনেক বিভ্রান্তি করেছেন। একটি বাড়িতে যদি কারও মৃত্যু হয় তাহলে সেই বাড়িটির অভিভাবকেরই প্রথম দায়িত্ব থাকে মৃত্যু সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করার জন্য। কিন্তু নুসরাত যে বাড়ির মূল ভাড়াটে ছিলেন সে তথ্যটি তিনি গোপন করেছিলেন।
অতিউৎসাহী হয়ে অসংলগ্ন বক্তব্য : এই মামলাকে কার্যকর করার জন্য নুসরাত অতিউৎসাহী হয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন, মিডিয়ার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং সব জায়গায় তিনি কথা বলতে গিয়ে অসংলগ্ন বক্তব্য দেন। আর এসব অসংলগ্ন বক্তব্য করতে গিয়ে বাদী হিসেবে তার অবস্থান ক্ষুণœ হয়েছে এবং একাধিক রকম বক্তব্যের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলছে।
মুনিয়ার অতীত নিয়ে মিথ্যাচার : মুনিয়ার অতীত নিয়ে নুসরাত একের পর এক মিথ্যাচার করেছেন বলেও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। কারণ আত্মহত্যার প্ররোচনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষগুলোর যোগসূত্র এবং সর্বশেষ কার সঙ্গে মুনিয়ার কথা হয়েছে, কি রকমভাবে কথা হয়েছে। নুসরাত নিজেই তাকে বলেছেন, মুনিয়া তাকে কলা আনতে বলেছে, তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মৃত্যুর আগে যদি চাপমুক্ত থাকে মুনিয়া তাহলে প্ররোচনায় আত্মহত্যা হলো কীভাবেÑ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
একজনকে অভিযুক্ত করার টার্গেট : এই পুরো মামলাটিতে দেখা যায়, একটি উদ্দেশ্য ছিল একজনকে অভিযুক্ত করা এবং তাকে টার্গেট করা। মুনিয়ার মৃত্যুর সময় নুসরাত এখানে ছিলেন না, নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়ার কথাবার্তা হয়েছে স্বাভাবিক মানুষের মতো এবং কখনও মুনিয়া কোনো রকম উত্তেজনাকর ও হতাশাজনক কোনো কথাবার্তা বলেননি নুসরাতের বক্তব্য অনুযায়ী। তাহলে একজনকে হঠাৎ করে অভিযুক্ত করলেন। এসে তিনি লাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝলেন আত্মহত্যার প্ররোচনাকরী ওই ব্যক্তি। তিনি কি তাহলে অন্য কারও ইন্ধনে বা কাউকে খুশি করতে এই মামলা করেছেনÑ এই প্রশ্ন এখন তদন্তে সামনে চলে আসছে।