কুমিল্লার মেয়ে মুসারাত জাহান মুনিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন বড় বোন নুসরাত জাহান। তার অপকর্মের যেন শেষ নেই। সরজমিন অনুসন্ধনে নুসরাত মার্কেটিংয়ে চাকরির আড়ালে টার্গেট করে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, মেয়েদেরকে ফাঁদে পেলে দেহ ব্যবসা চালানো ও মাদক ব্যবসার তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন থেকে বছর দেড়েক আগে নুসরাত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ঝাউতলা শাখায় চাকরি করতো। চুক্তিভিত্তিক মার্কেটিংয়ে সে এ চাকরি করতো। মার্কেটিংয়ে চাকরি করার সুবাধে নুসরাত বিভিন্ন ব্যাক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতো। এদের মধ্যে টার্গেট করে ব্যাংকের বড় বড় গ্রাহকদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যেত নুসরাত।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের ঝাউতলা শাখার একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, নুসরাত মার্কেটিংয়ে চাকরির আড়ালে মূলত বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতো। এ জন্য সে অফিসে সময় মত কাজ করতে আসতো না। এমনকি নুসরাত আমাদের ব্যাংকে চাকরি করে এমন একজনের (শাহীন সাহেবের) সাথেও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
তিনি বলেন, কিছু দিন পর নুসরাতের এসব বিষয় জানাজানি হলে অনৈতিক কাজ জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ব্যাংকের ম্যানেজার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। তখন নুসরাত ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ও একজন সহকর্মী নামে ধর্ষণের মামলা করতে থানায় যায়। কিন্তু থানা নুসরাতের এটি ফাঁসানো মামলা বুঝতে পেরে মামলা নেয়নি। এরপরও থেমে থাকেনি নুসরাত। থানা মামলা না নিলে সে কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নুসরাত সাজানো এ মামলার উকিল হিসাবে নিয়োগ করেন এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠুকে। পরে ব্যাংকের ম্যানেজার ও ঐ সহকর্মীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলার আপোষ মিমাংসা করে নুসরাত।
নুসরাতের নিজের অনৈতিক সম্পর্কই শেষ নয়। সে টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদেরকে দৈহিক ব্যবসায় নিয়ে আসে। প্রথমে নিজেই সম্পর্ক সৃষ্টি করে পরে সেসব ব্যাক্তির কাছে বিভিন্ন মেয়েদেকে পাঠায় নুসরাত। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
নুসরাতের ফাঁদে পা দেওয়া একটি মেয়ের একজন নিকটাত্মীয় জানান, নুসরাত তার কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়কে ব্যাংকের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ আছে বলে একজনের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে ঐ মেয়েকে টাকার লোভ দেখিয়ে শারারিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন। এরপর থেকেই ঐ মেয়েকে একাজে নিয়মিত ব্যবহার করছেন নুসরাত।
অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, নুসরাত শুধু একাই অপকর্মে জড়িত থাকেননি। তিনি নিজের স্বামী মিজানুর রহমান সানিকে দিয়ে মাদক ব্যবসাও শুরু করেছিলেন।
নুসরাতের স্বামী মিজানুর রহমান সানি কুমিল্লা বর্ডার থেকে পেসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক এনে শহরে বিক্রি করতো। সে নিজেও এসব সেবন করতো। বর্ডার থেকে মাদক কিনতে গিয়ে দুবার পুলিশের হাতে আটকও হন নুসরাতের স্বামী সানি। আটকের পর সানির বিরুদ্ধে দুবারই মাদক ব্যবসার মামলা করে পুলিশ।
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গত ২৬ এপ্রিল লাশ উদ্ধার করা হয় মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১)। এ ঘটনায় তার বোন বাদী হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।
এরপর গত ২ মে মুনিয়ার মৃত্যুকে হত্যা উল্লেখ করে মুনিয়া ও নুসরাতের বড় ভাই শফিকুর রহমান সবুজ আদালতে জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
মুনিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাটি তদন্ত করছেন গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান। তিনি বলেন, মামলার তদন্তে অনেক তথ্যই আসছে। সেগুলো আমরা যাছাই বাছাই করে দেখছি।