এশিয়া কাপের আজকের পাকিস্তান-ভারত হাই ভোল্টেজের দুলতে থাকা খেলায় সব চাপ সামলে অবশেষে ৫ উইকেটের জয় তুলে নিল ভারত। এ যেন বিশ্বকাপে হেরে যাওয়া ম্যাচের মধুর প্রতিশোধ।
আজকের এই ম্যাচ জিততে শেষ ৩ ওভারে ৩২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। অষ্টাদশ ওভারে জাদেজা ১ চার ও ১ ছক্কায় ১১ রান তোলেন। তাতে ১২ বলে প্রয়োজন ছিল ২১ রান। কিন্তু হার্দিক পান্ডিয়া রউফের করা ১৯তম ওভারে ৩টি চার হাঁকিয়ে ম্যাচ নিজেদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসেন।
তাতে শেষ ৬ বলে জিততে ৭ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। শেষ ওভারের প্রথম বলে নাওয়াজ বোল্ড করেন ৩৫ রান করা জাদেজাকে। তাতে ৫ বলে প্রয়োজন ছিল ৭ রান। দিনেশ কার্তিক ১ রান দিয়ে প্রান্ত বদল করার পর চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে জেতান সেই পান্ডিয়া। তিনি ১৭ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন।
ইনিংসের শুরুতে ভারতকে প্রথমেই চাপে ফেলেন নাসিম শাহ। রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১ রানে লোকেশ রাহুলের উইকেট হারায় ভারত। অভিষিক্ত নাসিম শাহের করা বলটি রাহুলের ব্যাটে ইনসাইড এজ হয়ে স্টাম্প স্পর্শ করে। একই ওভারে বিরাট কোহলিও ফিরে যেতে পারতেন প্যাভিলিয়নে, যদি না গালি সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়ানো ফখর জামান ক্যাচটি মিস করতেন।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৯ রান তুলে ভারতকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি-রোহিত। এরপর আক্রমণে নেওয়াজ এসে ম্যাচটি ঘুরিয়ে নিলেন ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে। নেওয়াজের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারের শেষ বলটি লং অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে রোহিত ধরা পড়েন ইফতিখারের হাতে। ১৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন রোহিত।
রোহিত-কোহলিকে হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সূর্যকুমার। ইনিংসের ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিমের করা সিম আপ ডেলিভারি পড়ার পর একটু ঘুরে ভেতরের দিকে ঢুকল তীক্ষ্ণভাবে। আড়াআড়ি খেলার চেষ্টা করা সূর্যকুমারের ব্যাট ফাঁকি দিলে বল হিট করে অফ স্টাম্পে। ১৮ বলে ১৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
মাঝে এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের পরের ওভারের প্রথম বলে বিরাট কোহলিকে ফেরান নেওয়াজ। জায়গা বানিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কোহলিও। লং অফে আবারও ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ যায়। ৩৪ বল মোকাবিলায় ৩ চার ও এক ছক্কায় ৩৫ আসে কোহলির ব্যাট থেকে।
এরপর নেওয়াজ দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে, তবে সূর্যকুমার যাদব তেমন কিছু হতে দেননি।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এবারের আসরে এটাই দুই দলে প্রথম ম্যাচ। এশিয়া কাপের দ্বিতীয় দিনের হাই ভোল্টেজ এ ম্যাচে ভালো শুরু করলেও মধ্যভাগে যেন খেই হারালো পাকিন্তান। হার্দিক পান্ডিয়াদের বোলিংয়ের কাছে যেন অসহায় আত্বসমর্পন করলেন পাকিস্তানি ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ১৯.৫ বল খেলে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। ১৪৮ রানের লক্ষ্যে এখন ব্যাট করছে ভারত।।
ধীরগতির উইকেটে ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করার কাজটা সহজ নয় এটা ভালো করেই জানে রোহিতরা। কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় যখন দলের ওপেনার ফেরেন শূন্য হাতে, শুরুর ওভারেই। নাসিম শাহর শিকার হয়ে রাহুলের ফেরাটা ভারতকে অবশ্য অত ভাবায়নি। উইকেটে যে রোহিত-কোহলি ছিলেন!
দশম ওভারের শুরুর বলে রোহিতকে বিদায় করা নওয়াজ এবার শিকার করেন কোহলিকে।দশম ওভারের শুরুর বলে তাকে রোহিতের মতোই লং অফ দিয়ে সীমানাছাড়া করতে চেয়েছিলেন কোহলি। টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক, বলটা সোজা গিয়ে জমা পড়ে সেই লং অফে থাকা ইফতিখারের হাতে। নিজের পরপর দুই বলে রোহিত-কোহলিকে ফিরিয়ে ভারতকে রীতিমতো নাড়িয়েই দেন নওয়াজ। এদিকে ইনিংসের ১৮ তম ওভারে এসে পেসার নাসিম শাহ সরাসরি বোল্ড করেন সুরিয়া কুমার যাদবকে।
পাকিস্তান ম্যাচ মানেই আলাদা এক উত্তেজনা আর চাপে সমৃদ্ধ এক খেলা। নিজেদেরে ইনিংসের শুরুতে প্রত্যাশার সে চাপ নিতে পারেননি বাবর আজম আর ফখর জামানরা। শুরুতে তাদের উইকেট হারালেও রিজওয়ান আর ইফতেখার আহমেদের হাত ধরে ৬.৫ ওভারে ফিফটির দেখা পায় পাকিস্তান। আর ১৬ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে দলীয় শতক পার করে দলটি। যদিও টি-২০ ম্যাচে ফাইট দিতে এ রান মোটেও যথেস্ট না।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৩ রান তোলে পাকিস্তান। এরপর ৩৮ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ইফতিখার আহমেদ আর রিজওয়ান। ১৩তম ওভারে জুটিটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার বাউন্সার হুক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কার্তিকের গ্লাভসবন্দী হন ইফতিখার। করেন ২২ বলে ২৮ রান। নিজের পরের ওভারে এসে জোড়া শিকার করেন হার্দিক। সেট ব্যাটার রিজওয়ান ৪২ বলে ৪৩ আর খুশদিল শাহকে ২ রানে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন ভারতীয় এই অলরাউন্ডার।
সেখান থেকে দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় পাকিস্তান। ভুবনেশ্বরের লেগকাটারে আসিফ আলি ৭ বলে ৯ রানে জোরে ব্যাট হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ হন বাউন্ডারিতে। পরের ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজকে ১ রানে তুলে নেন অর্শদীপ সিং।
১১৪ রানে ৭ উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর লড়াকু পুঁজি পর্যন্ত গেছে শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে। হারিস রউফ আর শাহনেওয়াজ দাহানি ৮ বলে যোগ করে দেন মূল্যবান ১৯ রান। রউফ ৭ বলে ১৩ আর দাহানি ৬ বলেই ২ ছক্কায় করেন ১৬ রান।
১৯তম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করা ভুবনেশ্বরই ছিলেন ভারতের পক্ষে সবচেয়ে সফল। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩টি উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া।
ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এবারের আসরে এটাই দুই দলে প্রথম ম্যাচ।
এই ম্যাচে ভারত দলে বড় চমক বলতে উইকেট রক্ষক ব্যাটার রিশাভ পান্টের না থাকা। তার জায়গায় উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেন দীনেশ কার্তিক। চারজন পেস বোলার নিয়ে নামছে তারা। স্পিনার হিসেবে খেলছেন জাদেজা ও চাহাল।
অন্যদিকে পাকিস্তান দলে শাহিন আফ্রিদি না থাকা নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। হারিস রউফ, দাহানি ও নাসিমকে নিয়েই দলটি পেস আক্রমণ সাজিয়েছে। শাদাব খান ও নাওয়াজ ঘুর্ণিজালে ভারতীয়দের বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় নামবেন।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই ম্যাচ শুধুই একটা ক্রিকেট ম্যাচ না, এটা একটা মর্যাদার লড়াইও। যা জিততে মুখিয়ে থাকে দু’দলই। তাই প্রতিবারই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে থাকে বাড়তি উন্মাদনা। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।
টুর্নামেন্টে ‘এ’গ্রুপে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপের অন্য দল বাছাই খেলে উঠে আসা হংকং। বাছাই পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে নাম লেখায় তুলনামুলক দুর্বল দলটি। ফলে আজকের জয়ী দলই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ডে যাবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত।
এশিয়া কাপের মঞ্চে মোট ১৫বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান। তাতে জয়ের পাল্লা ভারী ভারতেরই। ৮বার জয় পেয়েছে ভারত, ৫বার জিতেছে পাকিস্তান। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ হয়েছিলো টি-২০ ফরম্যাটে। ঐ আসরে ভারত ৫ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল।
স্কোর:
পাকিস্তান : ১৪৭/১০ – ১৯.৫ ওভার
মোহাম্মদ রিজওয়ান: ৪৮
ইফতিখার আহমেদ : ২৮
বোলিং
ভূবনেশ্বর কুমার : ৪
হার্দিক পান্ডিয়া : ৩
আর্শদ্বিপ সিং: ২
ভারত: ১৪৮/৫ – ১৯.৪ ওভার
রবীন্দ্র জাদেজা :৩৫
বিরাট কোহলি: ৩৫
হার্দিক পান্ডিয়া: ৩৩*
বোলিং:
মোহাম্মদ নেওয়াজ: ৩
নাসিম শাহ: ২