বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতরা সহজেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। মূলত আইনি দুর্বলতায় শাস্তি না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মামলা হলেও প্রমাণ করা যাচ্ছে না জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চলমান এসএসসি পরীক্ষার ৬টি বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। আর বিগত ১৪ বছরে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ২ শতাধিক মামলা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৪৫টির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং মাত্র একটি মামলায় এক আসামির ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হয়েছে। মূলত ভুল আইনে মামলা, সাক্ষী হাজিরের ব্যর্থতা ও তদন্তের গাফিলতিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। আদালত এবং পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্র্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ঘটেই চলেছে একের পর এক ঘটনা। ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগই বেশি। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ সালের বিভিন্ন ধারায় ওসব মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রশ্ন ফাঁস, বইপত্র কিংবা যান্ত্রিক উপায়ে পরীক্ষার্থীকে সহায়তা করা, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেয়া, ভুয়া সনদ বানানো ও পরীক্ষায় বাধা দেয়ার মতো অপরাধ রয়েছে। সেগুলো আদালতে বিচারাধীন। তাছাড়া ডিজিটাল মাধ্যম (ডিভাইস ও অ্যাপস) ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে কিছু মামলা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও করা হয়েছে। ওই দুটি আইনে করা মামলাগুলো ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকার সিএমএম আদালতে বিচারাধীন। তাছাড়া পাবলিক পরীক্ষা আইনেও চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসের মামলা দায়েরে দুর্বলতা থাকলে বিচার যথাযথ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর সাক্ষী দিতে যারা আসে তারাও আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় উল্টোপাল্টা বলে। অর্থাৎ সাক্ষীরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দেয় সেটি কোনো কারণে তারা আদালতে দেন না। আবার ভুল আইনেও কিছুকিছু মামলা হচ্ছে যা আদালতের রায়েও এসেছে। ওসব কারণে আইন থাকার পরও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনটি সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন। কারণ প্রশ্ন ফাঁসের ফলে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানান, আইন সংশোধন না করলে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা দুরূহ। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে যথাযথ আইনই নেই। যে আইন আছে তাতে শাস্তি অনেক কম। সেজন্য বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। কারণ তদন্ত কর্মকর্তাকেও আইন অনুযায়ী তদন্ত করতে হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী অভিযোগপত্র দিয়ে থাকে এবং রাষ্ট্রপক্ষের তা প্রমাণের দায়িত্ব।