বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ভরাডুবির শঙ্কায় বাইডেন শিবির, নেপথ্যে কী?

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ১০৬ বার পঠিত

আর মাত্র কদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচন সামনে রেখে এরইমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছে দলগুলো। কারা কংগ্রেস (মার্কিন পার্লামেন্ট) নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নির্ধারিত হবে নভেম্বরের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই। একইসঙ্গে ঠিক হবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আগামী দুই বছরের ভবিষ্যৎ।

মধ্যবর্তী নির্বাচন কী ও কেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছর পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটাই মধ্যবর্তী নির্বাচন। মার্কিন সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন। ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা যাচাইয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি।

২০২০ সালের নির্বাচনে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। তার দায়িত্ব নেয়ার দুই বছর পর আগামী ৮ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই দিন মার্কিন জনগণ আরও একবার ভোট দেবেন।

কারা কীভাবে নির্বাচিত হন

মার্কিন সরকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন ৫৩৫ জন আইনপ্রণেতা, যারা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে পরিচিত। মার্কিন কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (প্রতিনিধি পরিষদ)। আইন তৈরির জন্য কংগ্রেসের এই দুটি কক্ষ আলাদাভাবে কাজ করে।

সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। আকার যেমনই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্য দুজন করে সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে, যারা সিনেটর হিসেবে পরিচিত এবং নির্বাচিত হন ছয় বছরের জন্য। প্রতি দু’বছর পরপর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়। অর্থাৎ এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টিতে নির্বাচন হবে।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে (যাকে সংক্ষেপে ‘হাউস’ও বলা হয়) সদস্য ৪৩৫ জন। প্রত্যেক সদস্য তাদের রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের এমপিও বলা হয়। তারা দু’বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। কাজেই দু’বছর পর পর হাউসের সবগুলো আসনের জন্যই নির্বাচন হয়।

সিনেট ও হাউসের পাশাপাশি গভর্নর, সারাদেশে রাজ্যের আইনপ্রণেতা, স্থানীয় কাউন্সিল ও স্কুল বোর্ডগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

মধ্যবর্তী নির্বাচন কখন হয়

চলতি বছর মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে ৮ নভেম্বর। নিয়মানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার, এমনকি সেই প্রথম মঙ্গলবার যদি মাসের শুরুর দিনও হয়। সেই হিসেবে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন পড়ছে ৮ নভেম্বর।

বর্তমান কংগ্রেস কাদের নিয়ন্ত্রণে

কংগ্রেসের দুই কক্ষই এখন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। সে কারণে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে কোনো বিল বা আইন পাস করতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে তাদের এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই অল্প ভোটের ব্যবধানে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের কোনো একটি কক্ষে বা উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তখন তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের যেকোনো পরিকল্পনা আটকে দিতে পারবেন। এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে পাঁচটি অতিরিক্ত আসন জিততে হবে।

সিনেটে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আরও তীব্র। বর্তমানে ১০০ সদস্যের সিনেটে দুই দলেরই সদস্য সংখ্যা ৫০-৫০। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা সিনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ কোনো ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে সমান সমান ভোট পড়লে তখন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়-পরাজয় নির্ধারণের জন্য তার ভোট প্রয়োগ করতে পারেন।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য রিপাবলিকানদের মাত্র একটি বাড়তি আসন জিততে হবে। সিনেটের যে আসনগুলোতে এবার নির্বাচন হবে, সেখানে কারা প্রার্থী হবেন, তা নির্ধারণ হয়ে গেছে মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত ‘প্রাইমারি নির্বাচনে’।

কারা জিততে পারে

ইতিহাস বলছে, সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউসে থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে। কাজেই রিপাবলিকানরা তাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে-এমন ইঙ্গিত আছে। তাছাড়া এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জনপ্রিয়তাও কম। তার প্রতি সমর্থন গত আগস্ট মাস থেকেই ৫০ শতাংশের নিচে আটকে আছে। ফলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের সমর্থনে ভাটা পড়তে পারে।

এ নির্বাচন ঘিরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউস খুব একটা আশাবাদী হতে পারছে না। ডেমোক্র্যাট শিবিরে পরাজয়ের ভয়-আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে জোর প্রচারণা চালালেও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তেমন আশা দেখছে না বাইডেন শিবির। ডেমোক্র্যাটদের উদ্বেগ, মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন তারা।

অন্তত সাম্প্রতিক জনমত জরিপ সে কথাই বলছে। কিছুদিন আগেও যেসব ডেমোক্র্যাট জরিপে সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে ছিলেন, তারাই বর্তমানে তলানিতে। সিনেট নির্বাচনে উভয় দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু ভোটের পাল্লা এ মুহূর্তে রিপাবলিকানদের দিকেই।

এরপর কী ঘটবে

মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হলে সবার নজর ঘুরে যাবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দিকে। এটা ২০২০ সালের লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। কারণ বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প- ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা বিবেচনায় রাখার কথা জানিয়েছেন দু’জনই। কিন্তু নতুন কয়েকজন প্রার্থীও এবার মাঠে নামবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

কংগ্রেসের আসন ছাড়াও ৮ নভেম্বর ৫০টি রাজ্যের ৩৬টি গভর্নর পদে নির্বাচন হবে। এই ৩৬টির মধ্যে এখন ২০টি রিপাবলিকানদের দখলে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হলে গভর্নররা বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারেন তাদের দলের প্রার্থীদের পক্ষে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com