কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ নৌবহরে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এরই মধ্যে হামলার জেরে ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানির ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। এই হামলায় জেলেনস্কি বাহিনীকে ব্রিটেন সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ রাশিয়ার। এদিকে রাশিয়ার অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। খবর রয়টার্সের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানা যায়, শনিবার (২৯ অক্টোবর) কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে সেভাস্তোপোল বন্দরে একের পর এক ড্রোন হামলা চালানো হয়। রুশ নৌবহর লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয় বলে জানায় ক্রেমলিন।
এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় ১৬টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এতে নৌবহরের একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ হামলায় ইউক্রেনকে সাহায্য করেছে যুক্তরাজ্য বলে অভিযোগ মস্কোর। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ২ বিস্ফোরণেও ব্রিটেনের হাত আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ব্রিটিশ সরকার এ হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মস্কোর এ দাবি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ইউক্রেনে নিজেদের ব্যর্থতা থেকে নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতেই রাশিয়া এ ধরনের মহাকাব্যিক মিথ্যা বলছে।
এরই মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন থেকে শস্য রফতানির যে চুক্তি হয়েছিলো তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ক্রেমলিন। মস্কোর দাবি, যে সব জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে সেগুলো ওই চুক্তির আওতায় শস্য রফতানিতে যুক্ত ছিল। রাশিয়ার এমন ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বন্দর থেকে কৃষি পণ্য রফতানির চুক্তি বাস্তবায়নে রাশিয়ার অংশগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তকে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিরসনের চেষ্টায় বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘নিজেদের স্থাপনায় কাল্পনিক সন্ত্রাসী হামলার’ নাটক সাজানোর অভিযোগ করেছেন। আর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, চুক্তি নস্যাতের জন্য মিথ্যা অজুহাতকে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে উৎপাদিত শস্য রফতানি বন্ধ ছিল। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই চুক্তির পর থেকে ৮০ লাখ টন শস্য রফতানি করেছে ইউক্রেন। নতুন করে রফতানি শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দামও কমেছে। তবে, রাশিয়া সরে যাওয়ায় ঘোষণা দেয়ায় বিশ্বে ইউক্রেনের শস্য রফতানির পথ সহজ করার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।