প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশি কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবো না। আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের একটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে, শেখ হাসিনাকে চাপ দিতে পারে এমন কোনো চাপ নেই। কারণ আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর তৈরির আগেতো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের পর টেলিফোন এসেছে। হেনো তেনো কারণেও টেলিফোন। একজন ভদ্রলোক একটি ব্যাংকের এমডি, তাকে এমডি পদে রাখতে হবে। আর এই এমডি পদে কি মধু, তাতো আমি জানি না।
তিনি আরো বলেন, আইনে নেই, তবু ৭০ বছর বয়স হয়ে গেলেও এমডি পদে তাকে থাকতে হবে। এতে একটাই হয় যে, এমডি পদে থাকলে বোধ হয় মানিলন্ডারিং করা যায়, এটাই সুবিধা। পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। তো সেই চাপও কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে এসেছে এবং তারপরেও নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু করে দেখালাম। সেই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কতগুলো আইন আছে। সে আইন অনুযায়ী সব চলবে। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। শ্রমিকদের অধিকার আমরা রক্ষা করি, ট্যাক্স বিভাগ আছে আলাদা। তারা সেটি আদায় করে। কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে, শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নেয়, তার জন্য শ্রম আদালত আছে। এ ক্ষেত্রে আমারতো কিছু করার নেই সরকারপ্রধান হিসেবে। পদ্মাসেতু কিন্তু করে ফেলেছি, এটুকুই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলাম।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠীর অস্ত্র পাচারের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের বিষয়ে তারেক জিয়ার জড়িত থাকা সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোকে ‘রাজনৈতিক’ বলে বিএনপি নেতাদের এড়িয়ে যাওয়া সম্পর্কিত সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেটা হাতে নাতে ধরা পড়ল যে ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্র পাচার হচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা ধরলেন তাকে অত্যাচার করা হলো, চাকরিচ্যুত করা হলো- সেটা রাজনৈতিক হয় কিভাবে? আর এই ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেই তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত এবং খালেদা জিয়ার মন্ত্রীরাও। তারপরও তারা যদি এটাকে রাজনৈতিক বলে তাহলে আমার মনে হয় জনগণই বিচার করবে। এটা জনগণের সঙ্গে ভাওতাবাজি বা মুনাফেকি ছাড়া আর কিছু না। অস্ত্র চোরাকারবারি ব্যবসাটাই হচ্ছে তাদের ব্যবসা। আর সেটাকে তারা রাজনীতি হিসেবে দেখাতে চায়।
সারাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থাশীল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার দল করে না, অন্য দল করে, তাদের মুখ থেকেই কিন্তু আমি এ তথ্যটা নিয়েছি। সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষের এখন একটাই কথা, এই সরকারেরই থাকা উচিত। এটা সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এরপর কী হবে দেখা যাক। ইলেকশন এটা জনগণের ইচ্ছা। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নেই। এ নিয়ে আফসোস নেই। তবে গত ১৪ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে আমাদের ওপর দেশের জনগণের আস্থা-বিশ্বাস বহুগুণ বেড়ে গেছে।
অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে সরকারের ঢালাও সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। দেশ বিদেশ থেকে বসে বসেও আমাদের সমালোচনা করে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে আমাদের সমালোচনা করে। আবার শুনতে হয়- কিছুই করিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, যে যেটাই বলুক, পরিকল্পিত উন্নয়ন করতে পেরেছি কিনা, সেটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনগণ আমাদের মূলশক্তি, তারা পাশে ছিল বলেই এটি করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, সামনে নির্বাচন। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, ১৯৭৫ সালের পর থেকে যেসব নির্বাচন হয়েছে, আর আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে নির্বাচন হয়েছে, অন্তত সেই ধরনের চুরি, ভোটকেন্দ্র দখল করা, কারচুপি করার সুযোগতো এখন নেই। এখন ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড হয়ে গেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আছে, সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার সুযোগ নেই। বিএনপির আমলে করা এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারও ভোটার তালিকায় এখন আর নেই। নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে আমরা একে সম্পূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ করে গড়ে দিয়েছি, যেন জনগণ নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী।
এর আগে, ৪ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগদানের পর কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দেশে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী।