গাজীপুর সিটির বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আরও এক কাউন্সিলর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। অনুমতি ছাড়া নাম আর স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় এই আবেদন করেছেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোমেন মিঞা।
সোমবার (২০ মার্চ) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এই আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন মোমেন মিঞা।
জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে পুনর্বহাল চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গাজীপুর সিটির ৬১ কাউন্সিলরের নামে একটি আবেদন করা হয়। তবে পরবর্তীতে বেশ কিছু কাউন্সিলর তাদের নাম ব্যবহার ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এরই মধ্যে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহীনুল ইসলাম মৃধা, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল হাসেমসহ কয়েকজন তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে আবেদন করেছেন।
আবেদনে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোমেন মিঞা উল্লেখ করেছেন, জাহোঙ্গীরের জন্য করা আবেদনে তার নাম ও স্বাক্ষর জুড়ে দেওয়া হলেও তিনি এ বিষয়ে অবগত নন। এমনকি তিনি স্বাক্ষরও করেননি।
গাজীপুর সিটির বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে এস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে ইস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়ি-ঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়ি-ঘরের জমি অধিগ্রহণে ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের নামে অর্থ আত্মসাত ও জিসিসির অর্থ লুটপাটসহ মোট ৭৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এসব দুর্নীতির বিষয় দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন পরিদর্শন, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে ইতোমধ্যেই। ওই প্রতিনিধি দল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহও করেছে।
দুদক সূত্র বলছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে বা হয়েছে। এরই মধ্যে গাজীপুরের কোণাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে গাজীপুর সিটির প্যানেল মেয়র মো. আসাদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় করা ৭টি মামলা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট আগাম জামিন পান তিনি।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। যাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, ‘দুর্নীতিবাজকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া পরোক্ষভাবে দুর্নীতিকে সমর্থন করার সামিল।’