নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: বাংলাদেশের মানুষ সহজ সরল। তারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না। শুধু হলি আর্টিসানে হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপত্তা শঙ্কা কিংবা জঙ্গিবাদের রিফ্লেকশন নয়।
গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় স্বদেশী ৯ নাগরিকসহ বিদেশি নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে এসব কথা বলেন দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করা ইতালিয়ান কয়েকজন নাগরিক।
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় নব্য জেমএবির নৃশংস জঙ্গি হামলার তিন বছর আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতের ওই হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই হামলায় ইতালির ৯ নাগরিক নিহত হন।
একটি চার্চের ফাদার ও ছিন্নমূল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে কাজ করেন ইতালিয়ান নাগরিক রিকার্দো তোবানিল্লি। তিনি দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। কিছুলোক অসুবিধা করছে। কিছু চিন্তা আছে, সতর্কতাও আছে। তবে ভয়ের কারণ নেই।’ সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থান ও সফল উদ্যোগের ভূয়সি প্রশংসাও করেন তিনি।
রিকার্দো তোবানিল্লি বলেন, ‘ওই রাতের হামলায় নাদিয়া, আদেলে ক্রিস্টিয়ানসহ নিহত ইতালিয়ান প্রায় সবাই আমার পরিচিত ছিল। ক্রিস্টিয়ানের সঙ্গে ঘটনার দু’দিন আগেও দেখা হয়েছিল। তখন ক্রিস্টিয়ান দুই সন্তানের সদ্য জন্ম দিয়েছে। ছোট্ট গ্রুপের হামলা হলেও ঘটনাটি ছিল আমাদের সবার জন্য হৃদয়বিদারক।’
ময়মনসিংহের একটি ক্যাথলিক চার্চের ফাদার অ্যাতিলিও বলেন, ‘৪৬ বছর ধরে এদেশে বসবাস করছি। কখনও ঝামেলা মনে হয়নি। এ দেশের ভাষা, মাটি নিজের হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ এখন সবাই সচেতন হয়েছে। বিপদ যেকোনো সময় আসতে পারে, আর কোনো সর্বনাশ যাতে না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকা জরুরি।’
তিনি এও বলেন, ‘আমি কোনো বিপদে ভয় ও শঙ্কাবোধ করি না। হলি আর্টিসান হামলাটি সবার জন্য শিক্ষা। সবাই শিক্ষা পেয়েছে। সচেতন হয়েছে।’
সোমবার দুপুরে হলি আর্টিসানে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো শেষে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর স্ত্রী আনিজি বারেলো রিজভী বলেন, ‘এ একটি ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে না। একটি ঘটনা বিচার্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ পছন্দ করে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। হলি আর্টিসানে একটি ছোট গ্রুপ হামলা করেছিল।’
বাংলাদেশে একটি ফার্মে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আনিজি বারেলো বলেন, ‘সেই রাতে (হলি আর্টিসানে হামলার রাত) ইতালিয়ান অ্যাম্বাসেডরের বাসায় ডিনারের দাওয়াতে ছিলাম। হলি আর্টিসানে আটকা পড়া বন্ধু ক্লাউডিয়ার সঙ্গে কথা হয় ভোর ৪টায়। হয়তো বুদ্ধির জোরে অনেক কষ্টে বেঁচে যান ক্লাউডিয়ার। কিন্তু এ দেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন না বলেই এখনও তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশে।’