দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন
শুভ মধু পূর্ণিমা আজ। এর অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা। তবে বিশ্বে এটি ‘মধু পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এটি সংগঠিত হয়েছিল বলেই এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। বানরের মধুদান একটি নিছক ঘটনা বলে মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে তির্যক প্রাণীর বুদ্ধ ভক্তি এবং দান, সেবা ও ত্যাগের একটি পরম শিক্ষা।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে আজকের এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মধু পূর্ণিমার শুভ এই দিনটি নানা উৎসব, আনন্দ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এই দিন বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে মধু দান করার জন্য উৎসবে মেতে ওঠেন। দিনটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা দেশ জাতি ও বিশ্ব শান্তি তথা সকল সত্তার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন।
আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে তথাগত বুদ্ধ এক বনে তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করছিলেন। ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় এই মহাপুরুষের শরীর থেকে আলো বের হচ্ছিল, তখন অন্ধকার জঙ্গল আলোকিত হয়ে যায়। এ সময় বনের এক দলছুট অস্থির হাতি এসে হাজির হলো। তথাগত বুদ্ধকে দেখে অস্থির হাতির মন স্থির হয়ে গেল। তখন হাতিটি ভাবল এ কোনো সাধারণ মানুষ নন। তার সেবা করে জীবন কাটিয়ে দেবে। হাতিটি বুদ্ধের সেবায় নিয়োজিত হয়ে গেল। হাতিকে বুদ্ধের সেবা করতে দেখে বনের এক বানর বুদ্ধকে কী দান দেবে অস্থির হয়ে গেল। এ সময় বানর গাছের মধ্যে একটি মৌচাক দেখতে পেল। তখন বানর উৎফুল্ল মনে সিদ্ধান্ত নিলো মৌচাকটি বুদ্ধকে দান করবে। মৌচাকের মধু দান করে বানর খুশিতে গাছে লাফালাফি করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে মারা যায়। এতে দানীয় চেতনায় বানর দেবপুত্ররূপে নবজন্ম লাভ করল। এ ঘটনার পর থেকে মধু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে।
বিহারে দেখা যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধুদানের এক আনন্দঘন পরিবেশ। বিহারে সন্ধ্যায় বৌদ্ধকীর্তন ও পুঁথিপাঠ করা হয় এবং বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ, ধূপপূজা, ভিক্ষুকে আহার্য দান, ধর্মীয় সভা ও বুদ্ধ-কীর্তন পরিবেশিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকা ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারসহ দেশের সব বৌদ্ধ বিহারে মধু পূর্ণিমা পালিত হবে।