রমজান আসতে না আসতেই খেজুরের আড়ত ও পাইকারি বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। আমদানি শুল্ক কমানো, বাজার তদারকিসহ সরকারের নানান উদ্যোগের পরও কমছে না খেজুরের দাম।
আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে সবচেয়ে বেশি দাম কমার কথা ছিলো খেজুরের। অথচ ১৬ দিন পর দেখা গেল রাজধানীর বাজারে এই খেজুরের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দেশের বাজারে খেজুরের দাম মানভেদে বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। ক্রেতাদের অভিযোগের বিপরীতে ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক কমানোর আগেই আমদানি হয়েছে ৯০ শতাংশ খেজুর।
শনিবার রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেডজুল, মাবরুম, আজওয়া ও মরিয়ম খেজুরের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
জাম্বো মেডজুল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। সাধারণ মেডজুল ১২০০ থেকে ১৪০০, মাবরুম খেজুর ১১০০ থেকে ১৪০০, আজওয়া খেজুর মানভেদে ৯০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে ভালো মানের মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। এছাড়া কালমি মরিয়ম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, সুফরি মরিয়ম ৭৫০ থেকে ৮০০, আম্বার ও সাফাভি ৯০০ থেকে ১২০০ ও সুক্কারি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালে রোজার আগে জাহেদি ব্র্যান্ডের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি (১০ কেজি) এক হাজার ২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। চলতি বছরের দুই সপ্তাহ আগেও একই ব্র্যান্ডের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি ১৮০০ টাকা।
এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার ঘোষণা দেয়। এর আগে খেজুর আমদানিতে মোট ৫৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। ১০ শতাংশ কমানোর পর এখন যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে।
ব্যবসায়ীরা জানায়, বর্তমানে খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টন ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। এর সঙ্গে কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ হারে দিতে হচ্ছে। এতে বর্তমানে সর্বমোট ৪৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর ফলে শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর পরও খুচরা বাজারে দামে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত রোজার আগে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরে শুল্ক দিতে হতো ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ২১ টাকা ৮৪ পয়সা। এবার সে শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা থেকে ২০৮ টাকা। মূলত শুল্কের প্রভাব পড়েছে খেজুরের দামে।
আমদানিকারকরা জানান, গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে খেজুরসহ চার পণ্যের শুল্ক কমানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের পর ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি করে বিপুল পরিমাণ খেজুর আমদানি করে বন্দরে খালাস না করে রেখে দেন। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারি শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির পর ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ খেজুর খালাস করেননি। এমনকি এরপর নতুন করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেজুর আমদানিও করেননি ব্যবসায়ীরা।