জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গত দুই বছর ধরে রোহিঙ্গারা এ দেশে এসেছে। এ দুই বছরে সরকার এতোই ব্যর্থ হয়েছে যে, দিনক্ষণ তারিখ ঠিক করেও গত তিনদিন আগে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পারেনি।
সরকারের ‘দুঃশাসনে’ দেশের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকে সারাদেশে তারা (সরকার) একটা লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। যেখানেই যাবেন সেখানেই দেখবেন আওয়ামী লীগের লোকেরা লুটপাট ছাড়া আর কোনো কিছু করছে না। যার ফলে আজকে সমস্ত কিছু ভেঙে পড়ছে, শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আজকে দুঃশাসন সমগ্র দেশে একটা অসহ্য, অস্বাভাবিক দুঃসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে।
ফখরুল বলেন, এ সরকার খুব সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। শুধু গণতন্ত্র নয়, রাজনীতিকেই ধ্বংস করছে। ১/১১-তে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছিল বি-রাজনীতিকরণের -সেই ধারাই এখন চলছে। পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে, প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে তাদের (আওয়ামী লীগ) একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দেশে বিচার ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই, আইনের শাসন বলতে কিছু নেই, ন্যায়-নীতি কোনো কিছুই নেই। এখন শুধু একদল একনীতি, একটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সেটা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আন্দোলন গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আজকে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই এ দানবকে সরাতে হবে। তা না হলে ৭১ সালে যে চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার সর্বত্রভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, তারা আজকে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আপনারা দেখুন ডেঙ্গু কী আকার ধারণ করেছে, হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্পূর্ণ এ সরকারের অব্যবস্থা ও তাদের অযোগ্যতার কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি একটি খুনির দল। উনি ভুলে গেছেন যে, উনারা ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ খুন শুরু করেছিলেন। সেদিনও তারা রক্ষীবাহিনী তৈরি করে তাদের নেতাকর্মীরা বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছে। সেদিন সিরাজ শিকদারকে খুন করা হয়েছিল -এ রকম অসংখ্য নেতাকর্মী সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার স্মৃতি সংসদ’। সাবেক মহাসচিব আবদুস সালাম তালুকদারের কর্মময় জীবন তুলে ধরে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি বর্তমান মহাসচিব।
সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে ও সদস্য শামসুজ্জামান মেহেদীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিরাজুল হক, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রশিদ উজ-জামান মিল্লাদ, নিলোফার চৌধুরী মনি, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, ওয়ারেস আলী মামুন, সুজাত আলী, প্রয়াত নেতার জামাতা এম হাসান ও ভাতিজী সাদিয়া হক বক্তব্য রাখেন।