নিজস্ব প্রতিবেদক: খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা গ্রহণের জন্য আবেদনের সময় শেষ হয়েছে গত ২০ অক্টোবর। এখন আর কেউ নতুন করে আবেদন করতে পারবেন না। তবে নির্ধারিত সময়ে যারা আবেদন করেছেন তা নিস্পত্তির জন্য এক মাস বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পাবেন তারা। তবে এ সময় সুবিধাভোগীরা নতুন কোনো ঋণ নিতে পারবেন না।
এর আগে গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন সময়সীমা বাড়ানোর আদেশ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঋণ পুনঃতফিসল ও এককালীন এক্সিট সংকান্ত বিশেষ নীতিমালা ঋণগ্রহীতার আবেদন নিস্পত্তির সময় বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের আদেশের আলোকে বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর-০৫/২০১৯ এর আওতায় ইতোপূর্বে গৃহীত আবেদন নিস্পত্তির জন্য সময়সীমা ১৯ নভেম্বর বা রিট পিটিশন নিষ্পত্তির তারিখ (যেটি আগে আসবে) পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ সময়ে নতুন করে আর কোনো আবেদন গ্রহণ করা যাবে না। পুনঃতফসিল বা এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে কোনো নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে না বলে সার্কুলারে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এতে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরল সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নিন্দা ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয়। এরপর গত ওই সার্কুলারের স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়।
এদিকে বিশেষ এই সুবিধা গ্রহণকারীরা ব্যাংক থেকে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে। সুবিধাগ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপি করা যাবে না। এখানে ছাড় দেয়া হয়েছে। নয়টি মাসিক কিস্তির তিনটি এবং ত্রৈমাসিক তিন কিস্তির একটি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির দুটি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণ খেলাপি, তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপি ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিমেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপি ঋণ আছে তার হিসাব করা হবে। কোনো ঋণ খেলাপি যদি মনে করেন এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপির তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, তাহলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সার্কুলারে।
এতে বলা হয়েছে, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ খেলাপিরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদবাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে।
এই এককালীন এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরবর্তীতে গ্রাহক কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা পুনরায় চালু করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আর রাইটঅফ বা অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে।
এর আগে ২০১৮ সালের জুনে শেষে অবলোপন বাদে খেলাপি ঋণ ছিল ৯০ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। এ হিসাবে বিগত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।