ক্রীড়া ডেস্ক: মাত্র একদিন বাকি। দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে টস করতে নামবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার আগে দিল্লির পরিবেশ এবং বায়ুদূষণ এতটাই খারাপ যে, তা মানুষের জন্য জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এতটাই খারাপ অবস্থা তে স্কুলগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন শ্রমিকরা। একই সঙ্গে খেলাধুলার যাবতীয় কার্যক্রমও বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অথচ, এতটা ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যেই সবকিছুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঠিকই অনুশীলনে নেমে যেতে বাধ্য হলেন বাংলাদেশ এবং ভারতের ক্রিকেটাররা। মারাত্মক বায়ুদূষনের মধ্যে চারদিক থেকে প্রচুর বাধা এবং আপত্তি সত্ত্বেও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং দিল্লির প্রশাসন অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি আয়োজনে বদ্ধ পরিকর।
দিওয়ালির পর দিল্লিতে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দিওয়ালির পর মাত্র এক সপ্তাহ পার হয়েছে। এমন একটি সময়ে কিভাবে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য দিল্লিকে বেছে নিলো বিসিসিআই- তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। যেখানে সবাই জানে যে, দিওয়ারির পরবর্তী এক-দুই সপ্তাহ দিল্লির পরিবেশ মারাত্মক হয়ে ওঠে! মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্ম হুমকি তৈরি করে এই পরিবেশ।
বিসিসিআই’র এ নিয়ে যে অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই, তা নয়। কারণ, এমন এক সময়ে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল তারা। এছাড়া ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন লঙ্কান ক্রিকেটাররা মাস্ক পরে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
চলতি বছর জুনের শুরুতেই বাংলাদেশের সফরসূচি ঘোষণা করা হয় বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে। রোটেশন পলিসির মধ্য থেকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ ভাগ করা হয় বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোতে। তবে ম্যাচ এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। তবে, বর্তমান বিসিসিআই কর্মকর্তারা মাত্র ১০ দিন আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। তাদের পক্ষে দায়িত্বে এসেই হুট করে ম্যাচ এক্সচেঞ্জ করা কিংবা দিল্লি থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।
ক্রিকইনফোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাহী রাহুল জহুরির সঙ্গে। তিনি দিল্লির বায়ুদূষণ এবং কেন এখানে ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে- এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতেই রাজি হননি। নতুন সচিব জয় শাহও মুখ বন্ধ রাখলেন। কোনো প্রতিক্রিয়া পর্যন্ত দেখালেন না। তবে নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি দু’দিন আগে জানিয়েছেন, শর্ট নোটিসে কোনোভাবেই ভেন্যু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এমন পরিস্থিতিতে দুই দলের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্টসাধ্য যেটা হবে, সেটা হচ্ছে- দুই দলের খেলোয়াড়দেরই চরম দূষিত পরিবেশের মধ্যে খুব কষ্ট করে অনুশীলন করতে হচ্ছে এবং খেলতে হবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের অনেকেই অভিযোগ করছেন, তাদের চোখ জ্বালা-পোড়া করছে, গলায় কালো দাগ পড়ে গেছে এমনকি তারা ঘুমাতেও পারছে না।
কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো যদিও বলে দিয়েছেন, তারা এ নিয়ে কান্নাকাটি করতে চান না। পরিবেশ খুব বেশি অনুকুলে নয়, তবে তিনি বিশ্বাস করেন- এমন পরিস্থিতিতে তো আর মাঠের মধ্যে কেউ মারা যাবে না।
ডোমিঙ্গো বলেন, ‘টাইগার কোচের ভাষায়, ‘এখানকার আবহাওয়া আপনি যেমনটা চান, তেমন নয়। খুব বেশি গরম নেই। বাতাসও নেই তেমন একটা। তবে ধোঁয়াটে পরিবেশটার সঙ্গে আসলে পরিচিত নই আমরা। যদিও এটা দুই দলের জন্যই সমান। একটা কথা বলতেই হয়, এটা আদর্শ পরিস্থিতি নয়। তবে আমরা এটা নিয়ে অভিযোগ করছি না।’
তবে, ডোমিঙ্গো ভদ্রতা বশতঃ যাই বলে থাকুন না কেন, শুক্রবার দলবল নিয়ে যখন তারা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে যান, তখন তাদেরকে সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যেও যথাসাথ্য চেষ্টা করেছেন দলকে ভালো একটা প্রস্তুতি দেয়ার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, যত ভালো প্রস্তুতি নেয়া যায়। আমাদের মধ্যে ছোটখাটো কিছু ইনজুরি সমস্যা হয়েছে, এটা গুরুতর কিছু নয়। কেউ তো আর মরে যাচ্ছি না। তবে এমন পরিবেশে আমরা মাঠে বা বাইরে ৬-৭ ঘণ্টা থাকতে চাই না। ম্যাচের জন্য তিন ঘণ্টা আবার অনুশীলনে ৩-৪ ঘণ্টা।’
তবে দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন চেষ্টা করছে কৃত্রিমভাবে পানি ছিটিয়ে হলেও পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক রাখতে। স্টেডিয়ামের আশপাশের যত গাছপালা আছে, সবগুলো পানি দিয়ে বৃষ্টির মত ধুয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে ওই এলাকায় ধুলাবালি উড়তে না পারে। এছাড়া স্টেডিয়ামের পাশে দুই কিলোমিটার এলাকায় পানি ছিটিয়ে তারা চেষ্টা করছেন, পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে।