বিশেষ প্রতিবেদক: দেশে প্রতি চারজন মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস আছে এমন ৫০ শতাংশ রোগী জানেনই না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) উদ্যোগে রাজধানীসহ সারাদেশে এক লাখেরও বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরজুড়ে দেশের প্রতিটি উপজেলাসহ মোট ৮০০টি স্পটে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে ওই গবেষণা চালানো হয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে কর্মসূচি নেয়া হয়। বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা কর্মসূচিতে তাদেরই পরীক্ষা করা হয়, যারা জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে।
এক লাখেরও বেশি মানুষের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে গিয়ে বাডাস দেখেছে যে, তাদের ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ সংখ্যা এতদিনের অনুমিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
আগামীকাল (১৪ নভেম্বর) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের আগের দিন আজ (বুধবার) রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে বাডাসের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বাডাস সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডায়াবেটিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। দেশব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে রোগটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারলে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আগামীকাল বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সব সদসভুক্ত দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আসুন, পরিবারকে ডায়াবেটিসমুক্ত রাখি।’ বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রােগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করাই এ দিবসটির প্রধান লক্ষ্য।”
‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটিরও বেশি ( সূত্র : আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস , ২০১৭ , ৮ম সংস্করণ) । টাইপ – ২ ডায়াবেটিস যেহেতু বহুলাংশেই (৭০ % পর্যন্ত ) প্রতিরােধযােগ্য, ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরােধ না করা যায়, তাহলে এ সংখ্যা ২০৪০ সাল নাগাদ প্রায় ৬৪ কোটিতে পৌঁছানাের আশঙ্কা রয়েছে (সূত্র : আইডিএফ)।’
‘বর্তমানে দেশে প্রায় ৭৩ লাখ লােক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয় (সূত্র : আইডিএফ এটলাস , ২০১৭), যাদের প্রায় অর্ধেকই নারী। তাছাড়া এ কথাও উল্লেখ করতে হয় যে, ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি লােক জানেই না যে, তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন গর্ভবতী নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ- ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।’
বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ও গর্ভস্থ শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তবে তাদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি। এ অবস্থায় পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।